খুব অদ্ভুত লাগে
তাই না? দেখতে দেখতে চারটি বছর পার করে ফেললাম! মাঝে মাঝে চলে যাওয়া সময় গুলো নিয়ে
ভাবি। কত শত বন্ধুদের কে নিয়ে কাটিয়ে দিলাম জীবনের অর্থপূর্ন এই সময়গুলি। আজ আমার সেইসব
বন্ধুদের গল্প বলব।
আমি আর মতিনের
সেই কলেজ লাইফ থেকে দোস্তি। তখন থাকিও কাছাকাছি জায়গাতে। আমাদের ভর্তি পরীক্ষাতে যেই
সিরিয়াল আসছিল তাতে সিএসই পাওয়ার কথা না। তো কোন এক পড়ন্ত বিকেলে সিরিয়ালের আপডেট জানতে
ইউনিভার্সিটিতে এসে তো আমাদের চোখ ছানাবড়া। একি! আমরা দেখি সিএসই পাইছি! এরপরের ইতিহাস
খুব সহজ। ধাই করে ঢুকে গেলাম আমাদের প্রিয় এই ডিপার্টমেন্টে।
প্রথম দিনের কথা
এখনো মনে আছে। আমি, শুভ আর মতিন এক সাথে বসেছিলাম। শুরুর দিন বলে সকল স্যার ম্যাডামদের
সাথে পরিচিতিপর্বতেই যথেষ্ট পরিমানের ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন উপমা ম্যাডাম। সেদিন না বুঝলেও
পরবর্তিতে বুঝতে পেরেছিলাম মনোয়ার স্যারের মিটিমিটি হাসির পিছনে কি লুকিয়ে আছে, কিংবা
ল্যাবে আবু স্যার কি করতে পারেন! আমাদের ফার্ষ্টইয়ারের প্রথম দিনের প্রথম ক্লাশটি নিয়েছিলেন
মনোয়ার স্যার। আমার মনে আছে স্যার শুরুর দিনে জানতে চেয়েছিলেন প্রগ্রামিং এর ব্যাপারে
আমাদের কার কি নলেজ আছে। আমরা সবাই ই কম বেশি আমাদের পান্ডিত্য দেখানোর চেষ্টা করলাম।
আমার অ্যান্সার ছিল অনেকটা এরকম, “স্যার, আমি থিওরিটিক্যালি সি এর ব্যাপারে জানি। কিন্তু
প্র্যাক্টিক্যালি কিছুই জানি না”! রিদোয়ান ছিল মস্তবড় একজন হ্যাকার যে কিনা সারাজীবনে
কখনোই কিছু হ্যাক করতে পারেনি, ব্যাপারটা সেদিনই জানতে পেরেছিলাম। তবে খুব সম্ভবত আমাদের
সবাইকে সেদিন চমকে দিয়েছিল আবির। ওর ব্যাপারটা ছিল এরকম, “স্যার, আমি সি, সি++, জাভা
সহ প্রগ্রামিং কন্টেষ্টের জন্য যা যা লাগে সবই জানি”! ফলাফল, সবার চোখ মূহুর্তের মধ্যে
গেল আবিরের দিকে। আমাদের এই আবিরই পরে আইওআই তে বাংলাদেশী হিসেবে প্রথম রূপা জয় করে।
ডিপার্টমেন্টে
আমার একেবারে শুরুর দিকের লাইফ ছিল অনেকটা শুভ, যোবায়ের আর আশরাফ কেন্দ্রিক। কলেজের
আগে আমি থাকতাম পটুয়াখালী নামক এক ছোট্ট শহরে। নটরডেমে পড়ার কারনে কলেজ লাইফেও খুব
একটা ঘুরাঘুরি করতে পারিনি। সব ঝাল আমি মিটিয়েছিলাম তখন। আজকে শুভর বাসায় কিংবা পরের
দিন আশরাফের আস্তানায়, এভাবেই চলছিল দিনগুলি।
ক্লাশ শুরু হতে
না হতেই স্যার ম্যাডামরা আমাদের বলল আমাদের দুইজন সি-আর(ক্লাশ রিপ্রেজেন্টিটিভ) থাকতে
হবে, একজন ছেলে আরেকজন মেয়ে। প্রিয়াঙ্কা আর সাদ আমাদের সি-আর নির্বাচিত হয়েছিল। প্রিয়াঙ্কাকে
আমি শুরুর দিকে কেন জানি দেখতে পারতাম না। ওরে দেখলেই কেন জানি মনে হত বদমেজাজী স্বভাবের।
আমার ওই ধারনাটা খুবই বড় মাত্রার একটা ভুল ছিল। আচ্ছা কোন একটি মেয়ে কতটা ভাল হতে পারে,
আপনার কি কোন ধারনা আছে? সব ভুলে যান। আমাদের প্রিয়াঙ্কা আপনার ওই মেয়ের থেকেও ভাল।
প্রিয়াঙ্কা ঠিক কিভাবে কিভাবে আমাদের “খালা” হয়েগেছিল সেটা এখন মনে নেই। কিন্তু সে
ক্লাসে আমাদের সবার খালা। আমাদের আরেক সি-আর সাদ মারাত্মক টাইপের ভদ্র এবং সামাজিক
ছেলে। ক্রিয়েটিভও। আমাদের নবীন বরন অনুষ্ঠানের জন্য ওর বানানো মিউজিক ভিডিওটি অসাধারন
ছিল।
আমার ফার্ষ্ট
ল্যাব পার্টনার ছিল অনিক আর সাকিব। সাকিব ছেলেটা ছিল একেবারে গোবেচারা ধরনের, আর অনিক
ছিল বেশ স্মার্ট। ডিজিটাল সিসটেমসে আমরা একই গ্রুপে ল্যাব করতাম। যতদুর মনে পরে ওরা
আমাকে সার্কিট ডিজাইন করে দিত, আর আমি বসে বসে কানেকশান দিতাম। এই ল্যাব গ্রুপেই আমরা
বেসিক ইলেক্ট্রনিক্সের ল্যাবও করেছিলাম। এখানে অবশ্য অনিক কানেকশান দিত। কারন, এই ল্যাব
আমি কিছুতেই মিলাতে পারতাম না। ওরা দুইজনে কেমনে কেমনে সব কিছু মিলায়ে ফেলত।
ফার্ষ্টইয়ারের
জুন মাসে আমাদের একটা প্রগ্রামিং ক্যাম্পের মত হয়। যারা প্রগ্রামিং এ একটু দুর্বল তাদের
জন্য একটা টাইপের ক্লাশ। যারা একটু অ্যাডভান্স তাদেরকে আরেক টাইপের ট্রেইং এর ব্যাবস্থা
ছিল। মনোয়ার স্যার ব্যাবস্থা করেছিলেন সব কিছুর। সারা জুন মাস আমরা এভাবে অনেকটা মজার
মধ্যে প্রগ্রামিং করে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। সবার মধ্যে সে কি উত্তেজনা থাকত সেদিনগুলিতে।
একজন একটা প্রব্লেম সলভ করতে পারলে বাকিরা সেটার উপর রীতিমত হামলে পরত।
মুটামুটি একটা
সময়ে আমাদের মধ্যে এরকম একটা ট্রেডিশান হয়ে গেল যে, কারো জন্মদিন হলে সে সবাইকে খাওয়াবে।
প্রথম প্রথম আমরা হয়ত সবাই মিলে হাকিমের খিচুরী টিএসসিতে নিয়ে খেতাম। সাদিয়া, তৃষা
আর মেরী মনে হয় এরকম কিছু পার্টি দিয়েছিল। এরপর পাঠ্যবইয়ের উপরের ক্লাশে উঠার সাথে
সাথে আমাদের এই ট্রিট পার্টির অবস্থানও উপরে উঠে। মানে টিএসসি থেকে যায় ষ্টার কাবাবে।
কত কত যে লেগরোষ্ট খেলাম এই ষ্টারে!
সকল শ্রেনীকক্ষ
সেটা কিন্ডার গার্ডেন হোক কিংবা স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোক একটা কমন প্রবনতা
থেকেই যায়, আর সেটা হল ছেলে মেয়েদের নতুন নতুন নামে ডাকা। এই ব্যাপারটাতে প্রথম ধরা
খেল প্রিয়াঙ্কা। প্রিয়াঙ্কা হল “খালা”। মাদিহা থেকে আসল “ম্যাড”। তাবাসসুম তৃষা থেকে
“ট্যাব”। অবশ্য তৃষা আমার “শ্যালিকা” নামেও পরিচিত। রোল ৮৩ শুভ-র নাম আগে থেকেই ছিল
“লিনাক্স শুভ”। রোল ১৮ আসিফ কার ঘন্টা বাজাতে বাজাতে কিভাবে যেন হয়ে গেল “ঘন্টা আসিফ”।
রবিউল হয়ে গেল “কাকা”। টিটি খেলে খেলে মাসুদ হয়ে গেল “টিটি মাসুদ”। প্রগ্রামিং আর পড়াশুনার
প্রতি প্রবল আসক্তির জন্য মুন্নার নাম দেওয়া হল “পগা”। আর নায়লা কথা বার্তা কম কম বুঝত
বলে এক সময় আমাদের “মামনি” হয়ে গেল। এই নাম করনের প্রভাবের একটা উদাহরন দেই। একদিন
মাদিহা যোবায়েরকে ফোন করে বলতেছে, “কে যোবায়ের? আমি ম্যাড বলছি!”(:P)
প্রথম দিকে আমাদের
একটা অনেক বড় দল ছিল। শুভ, যোবায়ের, আশরাফ, ফাহিম, মতিন, প্রিয়াঙ্কা, মাদিহা, পিঙ্কি,
নায়লা, মেরী, দিবা, সাদিয়া … সময়ের বিবর্তনে যেটা এখন বিলুপ্ত প্রায়। অন্যদের কথা জানি
না, আমি অন্তত এই দলটাকে অনেক মিস করি। সবাই মিলে হয়ত সপ্তাহে একটা দিন আড্ডা দিতাম,
কিন্তু সেটা হত অনেক বেশি জীবনোল্লাসে পরিপূর্ন।
সংস্কৃতির মাঠে
আমাদের ক্লাশের ছেলে মেয়েরা কোন অংশে পিছিয়ে ছিল না কখনোই। আসমা, মেরী আর নিপা আমাদের
ক্লাশের সেরা নাচিয়ে। প্রিয়াঙ্কা, সীমা, তামিম, ইরফান তাদের গানের যাদুতে বরাবরই আমাদের
মুগ্ধ করেছে। ফাত্তাহ বেশ ভাল গিটার বাজায় আর মুন্না ড্রাম বাজাতে পারে।
পছন্দ অপছন্দের
ব্যাপারে আমরা সকলেই একটু ডিফারেন্ট হলেও, ল্যাব/ইঙ্কোর্স/ফাইনাল পরীক্ষা পিছানোর ব্যাপারে
আমাদের না-বোধক কিছু নেই। সকলের সব অমিল এই একটা যায়গাতে এসে কিভাবে কিভাবে যেন মিল
এ পরিনত হয়! এই যায়গাটাতে মনে হয় আমাদের কাছাকাছি অন্য কোন ব্যাচও আসতে পারেনি। হয়ত
কোথাও সমাবেশ হচ্ছে, স্যার এই ইঙ্কোর্স তো দেওয়া যাবে না! আমাদের নিয়মিত আবদারই ছিল
যেন এগুলো।
এবার আসি অন্য
বন্ধুদের নিয়ে। আমার প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে পিঙ্কি অনেক অনেক উপরে থাকে সব সময়ই। আমাদের
এই “মিস ফার্ষ্ট” কে আমি সবথেকে বেশি মিস করি যদি সামনে কোন পরীক্ষা থাকে। পিঙ্কির
ব্যাপারে একটা সিক্রেট শেয়ার করি। পিঙ্কি খুবই চাঁপা স্বভাবের একটি মেয়ে। হয়ত খুব মন
খারাপ নিয়ে সবার সাথে আড্ডা টাড্ডা দিবে, কথা বলবে … কেউ কিছুই টের পাবে না টাইপের
আরকি। ক্লাশের নির্মল আনন্দদায়ী ব্যাক্তি মিশু কাজী। চরম সেন্স অফ হিউমার যুক্ত আমাদের
এই বন্ধুটিকে আমি অন্তত খুব মিস করব ফিউচার লাইফে। যে মেয়েটি এখন পর্যন্ত আমাকে বেশী
বার কনফিউসড করে দিছে সে হল চাঁদনী ইসলাম। এক্সাম হলে আমার “ওয়ান টু ওয়ান” পার্টনার
আরাফাত। তামিম হচ্ছে “মিষ্টার তাহসান”। মুশফিক ছেলেটি “Decent”। মারাত্মক টাইপের ভাল
এই ছেলেটি কিন্তু রোমান্সের দিক থেকেও পিছিয়ে ছিল না কখনো! ক্লাশের সব থেকে ভাল ছেলে
যেগুলো, আসিফ(রোল ২) তাদের উপরের দিকে থাকবে সব সময়। চমৎকার মেধাবী এই ছেলেটি কখনোই
তার মেধার সঠিক ব্যাবহার করেনি এইটাই শুধু আমার আফসোস। ঘুমকাতুরে হিসেবেও আমাদের এই
বন্ধুর বেশ সুনাম আছে। আমি একটা উধারন দেই। একদিন থিসিস এর কাজে হলে গেলাম। তখন ১১/১২টার
মত বাজে। আসিফ ঘুমিয়ে ছিল। আমি ওকে তুলে বাথরুমে পাঠিয়ে দিলাম। এর ফাঁকে সাফির সাথে
গল্প করছিলাম। অনেকক্ষন পরে আবিষ্কার করলাম এর মধ্যে প্রায় এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে।
আসিফের কোন খবর নাই। অবশেষে অনেক খোঁজা-খুঁজি করে আসিফকে পেলাম আরেকটা রুমে, ঘুমাচ্ছিল!
আমাদের মুন্না কাজ পাগল। একটা কাজ এর হাতে কেউ ধরিয়ে দিতে পারলেই কাজ শেষ। ক্লাশের
একেবারে নির্জীব ভদ্র ছেলে উপল। “ব্রেইন ড্রেইন” মানে মেধাকে ড্রেইনের মধ্যে ফেলার
চমৎকার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আমার বন্ধু সজীব। পরিশ্রমকে দৃষ্টান্তের পর্যায়ে
নিয়ে গেছে তমাল অধিকারী। সাইকেলে করে ডিওএইচএসে টিউশনিতে যাওয়া কিংবা রাত ১০/১১ পর্যন্ত
টিউশনি করে আবার পরের দিনের ইঙ্কোর্সের পড়া সব কিছুই তমাল করছে হাসিমুখে। আমাদের ক্লাশের
প্রথম থিসিস পেপার পাবলিশ করা এই ছেলেটি কার্ড খেলাতেও দুর্দান্ত। ক্লাশের “স্মার্টেষ্ট
মেয়ে” আসমা। ভাল ছাত্রী, আধুনিক, স্মার্ট, ড্রেসের দিক থেকে খুব সেন্সিবল … ব্লা ব্লা
এরকম ভুরি ভুরি লেখা লিখা যায় আমাদের আসমাকে নিয়ে। আমাদের “ভার্চুয়াল ম্যান” ইরফান।
মাসুদ পারভেজ ছেলেটা একটু চুপচাপ ধরনের। ল্যাবের কাজ নিজে নিজে করে ঠিক ঠিক টাইমে সাবমিট
করতে মাসুদের কখনো ভুল হত না। ক্লাশে “মুড়ির ঠোঙ্গা” নামে পরিচিত নায়লা। কোন কথা কিভাবে
না বুঝে থাকা যায়, নায়লাকে না দেখলে সেটা ভাল ভাবে বুঝা যাবে না। আমরা হয়ত কোন একটা
কথা শুনে হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছি, নায়লার কোন ভাবান্তর নেই। আমাদের হাসি শেষ হওয়ার
পরে ওর কমন প্রশ্ন, “তোরা এভাবে হাসতেছিস কেন? আমি তো কিছুই বুঝতেছি না!”। নায়লার আরেকটা
দিক হল, রেজাল্টের দিনের কান্না। ওর কান্নায় এদিন ডিপার্টমেন্টের সামনের রাস্তায় পানি
জমে যায়! অমিত হচ্ছে “ওডেস্ক বয়”। মিজান খুব সিনসিয়ার স্টুডেন্ট। আমার “ডিপার্টমেন্টাল
শ্যালিকা” হল তৃষা। একটা টাইপের চিংড়ি মাছ আছে না খুব ছটফট করে, নাম ভুলে গেছি এই মুহূর্তে
… ওইটা হল সীমা। সীমার মাঝেও অসীম টাইপের অবস্থা। আমাদের “সুন্দরী তমা” হচ্ছে নিপা।
মনির হচ্ছে “মিষ্টার সিরিয়াস”! রুমার কথা লিখতে গেলেই হাবিবার কথাটা চলে আসবে। সারাক্ষন
দুইটা মেয়ে কিভাবে এক সাথে থাকতে পারে এদের না দেখলে বোঝা যাবেনা কিছুতেই। ইকবাল হল
“মিষ্টার পারফেক্টশনিষ্ট”। কালই হয়ত কোন একটা পরীক্ষা, আমরা এরকম সময় যেটা করি শুধু
হালকা একটা ধারনা নিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে এক্সাম হলে যাই। ইকবালের ব্যাপারটা ভিন্ন।
পরীক্ষা থাকুক পরীক্ষার মত, সে ব্যাপারটা ভালমত বুঝেই ছাড়বে। রিদোয়ানের জীবনে একটা
ব্যাপারই আছে, আর সেটা হল প্রগ্রামিং কন্টেষ্ট। কর্মঠ ছেলে ফাহিম। কোন কাজে জোঁকের
মত লেগে থাকার অসীম ধৈর্য আছে হেলালের। “মিষ্টার রিজার্ভ” হচ্ছে শাহীন। “সিরিয়াল গার্ল”
হল দিবা। কোন হিন্দি সিরিয়ালের কোন নায়ক অসুস্থ হলেই দিবার মনটা কষ্টে নীল হয়ে যায়।
কিছু মেয়ে আছে না যারা অন্যদেরকে সব সময় ছোট ভাই বোনের মত দেখে? আমাদের নোরা আমার ধারনা
অনেকটা সেরকম। দ্বায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারে এই মেয়েটি। অনিমা তো সেরকম লেখিকা। “লম্বুরানী”
হল মেরী। সাদিয়া হল “মায়াবতী” টাইপের মেয়ে। লামিয়া হচ্ছে বুদ্ধিমতি মেয়ে। এলিনা হচ্ছে
চুপচাপ ঘরনার মেয়ে। সাফির রুমে কত রাত থাকলাম এই ইউনিভার্সিটি লাইফে। সাকিন হচ্ছে আরেকজন
“ল্যাব বয়”। সাকিনের ল্যাব করা মানে ৬০/৭০ ভাগ ছেলে মেয়ের ল্যাব শেষ। শুভ(রোল ৮৩) হল
আমার ল্যাব গ্রুপ চেঞ্জের পার্টনার। মানে আমি “ইভেন গ্রুপ” থেকে “অড গ্রুপে” আসি আর
ও অড থেকে ইভেনে যায়। অভিষেকের সাথে অভিষেক বচ্চনের মিলটা কেবল লম্বাতেই না। ফাত্তাহ
খুব পাগলাটে স্বভাবের। গুঞ্জন হচ্ছে “মিষ্টার ডাউনলোড”। আমাদের “মিষ্টার শেয়ার বাজার”
হল নাহিদ। ফয়সাল বারী র সাথে আমাদের বিচ্ছেদ ফার্ষ্ট ইয়ারের পরই। ছেলেটা অসাধারন টিটি
খেলত। রাকিব হল “মিষ্টার গেমার”। শাকুর হল “পিকে”, আর ফরহাদ হল “পিডি”(পুরান ঢাকাইয়া)।
যোবায়ের আর শুভ
না থাকলে আমার জীবনটাই হয়ত এরকম রঙ্গীন হত না। ওরা আমার জীবনে কি সেটা আমার মত বোকা
বোকা লেখক কখনো লিখে বুঝাতে পারবে না। ওরা ঠিক আমার কাছে বন্ধু না, “ব্যান্ড অফ ব্রাদার্স”।
শুভ ছেলেটা খুব ইমোশনাল, কিন্তু এই শুভর থেকে ভাল ছেলে আমি লাইফে কখনো দেখিনি। যোবায়ের
ছেলেটা বিনয়ী। কাউকে কিছু বুঝায়ে দিতে হবে, এরকম সময়টাই মনে হয় ও সব থেকে বেশি উপভোগ
করে। আমরা তিনজন কতশত সময় কাটিয়ে দিলাম এক সাথে … কোথায় হারিয়ে গেল সেই সময়গুলি?
আমার ব্যাপারে
আমার লেখাটা ঠিক মানানসই না, তাই না? আবার না লিখলে যে ঠিক সেটি আমাদের গল্পটি হচ্ছে
না! খুব ভেবেও তেমন কিছুই পেলাম না আমার ব্যাপারে বলার মত। হুট হাট মেজাজ খারাপ করে
ফেলা ফালতু স্বভাবের ছেলে একটা আমি। ক্লাশের মেয়েদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়িয়েছি
সারা ইউনিভার্সিটি লাইফ। আমার ভাল স্বভাব বলতে বললে আমি বলব, আমি খুব সহজেই মানুষকে
বন্ধু বানিয়ে ফেলতে পারি। অবশ্য সমালোচকরা বলে থাকেন, আমি নাকি বন্ধুদের সাথে যে রকম
মিশুক স্বভাবের, অন্যদের সাথে ঠিক সেরকম অ্যা্রোগেন্ট! ঠিক জানি না আমি কিরকম। তবে
মানুষকে একি সাথে অনেক আনন্দ এবং কষ্ট
দিতে আমার জুড়ি নেই বলেই আমার ধারনা।
এতগুলা মানুষ, সবার সাথে আলাদা গল্প, আলাদা ঘটনা … সব তো আসলে বিস্তারিত
লেখা সম্ভব না। তারপরও চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে কিছু না কিছু বলতে, কিছু না কিছু লিখতে।
মনের গহীনে এখন কান পাতলে কি শুনতে পাই জানো বন্ধুরা? বিরহের ডাক, বিচ্ছেদের বেদনা।
পরক্ষনেই ভাবি, এই তো জীবন। সব কিছুই মানুষের জীবনে কত কিছু আসে-যায়। বন্ধুরা কেবল
আমাদের জীবনে আসেই, কখনো হারিয়ে যায় না। যাবে না তো তোমরা?
লেখকদের নাকি
কিছু স্বীমাবদ্ধতা থাকে। চাইলেই সব কিছু নিজের মনের মত কিছু করে লিখতে পারে না। আমি
হয়ত সেই রকমই কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমাদের গল্প গুলি লিখেছি। কি আসে যায়? এটা তো
আমাদেরই গল্প। তাই না ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন