রবিবার, ৫ মে, ২০১৩

হাউজ নাম্বার ১০ এর ১ – বি, আরামবাগ(পর্ব - ১)


আমি যেই বাসায় থাকি, সেই বাসার গল্প লিখবো ভাবছিলাম অনেক দিন ধরে। লেখা আর হচ্ছিল না। কয়েকদিন আগে আমার এক হাউজমেট বাদল ভাই অন্যত্র চলে গেলেন। তখনই মূলত মাথায় আসে এই গল্পটি। আমি ঢাকার এসেছি সেই ২০০৫ সালে। তখন থেকে এই ২০১৩ পর্যন্ত এই একই বাসায় আছি। এর মধ্যে কত কত মানুষ আসল(হাউজমেট), আবার চলেও গেল। সেই সব মানুষদের সাথের স্মৃতিকথার গল্পই এটি। সব গল্পের শুরু থাকে একটা, যেখান থেকে শুরু হয় একটি পথচলার। তেমনি শুরু থেকেই শুরু হোক তবে …


কোন এক রৌদ্রজ্জল সকালে আমি আর আমার বন্ধু সালাউদ্দিন শুভ নিজ নিজ বাবার সহিত ঢাকা এসেছিলাম। উদ্দেশ্য উচ্চ মাধ্যমিকে ঢাকার কোন কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করা।আর এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য বিধেয় ছিল একটা ঠিকানা - ১০/১/বি আরামবাগ, মতিঝিল। সে দিনটি ছিল ৫ মে, ২০০৫। এখানে আমাদের স্কুলের একবছরের এক সিনিয়র ভাইয়া থাকতেন যিনি তখন নটরডেম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়তেন। উনার নাম সাইমুম কাওসার। অনেক খুঁজে টুজে বাসা বের করলাম। এখানে তখন ৫ জন মেস করে থাকতেন, যার মধ্যে চার জন পড়তেন নটরডেম কলেজে আর একজন ছিলেন চাকুরীজীবি। সাইমুম ভাই ছাড়া আর ছিলেন নয়ন ভাই, আদনান ভাই, সোহেল ভাই আর ওই চাকুরীজীবি ভাইয়া(নাম মনে নাই)। তখন উনাদের থেকে মন্ত্রমুদ্ধের মত শুনলাম নটরডেম কলেজের গল্প আর মনে মনে চিন্তা করছিলাম, পড়তে হলে এই কলেজেই পড়বো! আসলে আমাদের তখন মাত্র মেট্রিক পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। আমাদের ঢাকায় আসার একমাত্র কারন ছিল শুধু খোঁজ খবর নেওয়া যেমন কিভাবে ভর্তি হতে হবে, কি কি রিকোয়ারমেন্ট আছে কোন কোন কলেজের, কোন কোন কলেজ ভাল হবে … এসব আরকি।

রেজাল্টের পর আমার মাথায় হাত, গোল্ডেন এ+ পাই নাই। ঢাকায় যেরকম কম্পিটিশন শুনছিলাম, তাতে কোনই চান্স দেখছিলাম না ভাল কোন কলেজে ভর্তি হওয়ার। এর মধ্যে সরকার আবার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিস্টেম বন্ধ করে দিয়েছে। এর যায়গায় রেজাল্টের বেসিস এ মৌখিক পরীক্ষার অনুমতি ছিল। আবার ঢাকায় আসলাম রেজাল্টের পর। মাদারটেকে মামার বাসায় উঠলাম। নটরডেম কলেজ, ঢাকা কলেজ, রাইফেলস কলেজের ভর্তি ফরম কিনলাম। ঢাকায় ভর্তির চাপ অনুভব করে বরিশালের অমৃত লাল দে কলেজেরও ফরম কিনলাম। এর মধ্যে নটরডেম কলেজে মৌখিক পরীক্ষা দিলাম। মুটামুটি ১০টার মত প্রশ্ন করেছিল পরীক্ষায় … আমি মনে হয় ৭/৮ টার অ্যান্সার দিতে পেরেছিলাম। একটু টেনশনে ছিলাম আমি তখন, মনে হয় চান্সটা হাত ফসকে গেল। টেনশনে টেনশনে কাটছিল সেই সব দিনগুলি। এক সকালে নয়া দিগন্ত পেপারে বের হল রেজাল্ট এবং সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমি নটরডেম কলেজে চান্স পেলাম। আমার মনে আছে আমাদের ক্লাশ শুরু হয়েছিল ২১শে আগষ্ট, ২০০৫ সালে। তখনও আমি মামার বাসা থেকে কলেজ করতাম। এরমধ্যেই খবর পেলাম সাইমুম ভাইয়াদের বাসার ওই চাকুরীজীবি ভাইয়া চলে গেছেন। একজনের জন্য জায়গা খালি আছে, আমি চাইলে উঠতে পারি। তখন ঢাকাতে আমার বাইরে বের হতে ইচ্ছাই করতো না। কেমন যেনো, বাইরে বের হলেই খুব ক্লান্ত লাগত। অনেক চিন্তা ভাবনার পরে স্বীদ্ধান্ত নিলাম, ওই বাসাতেই উঠে যাই … কি আছে জীবনে। শুরু হল আমার মেস জীবন এবং আমার ঠিকানা হল ১০ এর ১ – বি, আরামবাগ। দিনটি ছিল ১ সেপ্টেম্বর, ২০০৫।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন