যুদ্ধপরাধী কাদের মোল্লার বিচারের রায়ের পরে দেশে অনেক কিছু ঘটেছে। এর মধ্যে প্রধান প্রধান ব্যাপার গুলোয় সবাই এর মনোযোগী যে কয়েকটা ব্যাপারে কোথাও কোন কথা দেখলাম না। এর মধ্যের কিছু ব্যাপারে আমি আমার অভিমত এখানে দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
প্রথমটা আমাদের মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রীর "যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়" এর ব্যাপারে অবস্থান।সাম্প্রতিক সময়ে উনি দেশের অবস্থা বর্হিবিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য একটা বিদেশী পত্রিকায় আর্টিকেল লিখেছেন। তার মানে দাঁড়াচ্ছে দেশের ব্যাপারে উনি সচেতন আছেন এবং দেশের যেকোন পরিস্থিতি সম্পর্কে উনি জ্ঞাত আছেন। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে উনি "যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়" এবং এর পরের গন-আন্দোলন এর ব্যাপারেও জ্ঞাত আছেন বলে আমরা ধরে নিতে পারি। এখন পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোথাও তিনি অভিমত দিয়েছেন এরকমটা আমার জানা নাই। আমাদের এই মহান নেত্রী এখন শুধু বিরোধী দলীয় নেত্রীই নন, উনি দেশের দুইবারের নির্বাচিত(আর একবারে জোড় করে দখলকৃত) প্রধান মন্ত্রীও ছিলেন। অথচ উনার কাছ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত উনার অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারলাম না। দেশের একজন নির্দলীয় সাধারন মানুষ হিসেবে আমি এই ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করছি। সাথে সাথে এটাও বলা প্রয়োজন, উনি উনার দলের সমর্থকদের সাথে কি বেইমানি করছেন না? দেশের একটা অংশ(যারা মন প্রান দিয়ে বিএনপি করে)কে কি আপনি অস্বস্থির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন না? মনে রাখবেন, এর দায় আপনাকেই নিতে হবে।
আরেকটা ব্যাপার আমাকে অবাক করেছে। সেটা হল, সরকারের নাকি "যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়" এর ব্যাপারে আপিলের সুযোগ নেই। আইনে নাকি সেটা রাখা হয়নি। এই ব্যাপারটা কিন্তু দুইটা ব্যাপার ইঙ্গিত করছে। এক, হয় যেসকল আইনজ্ঞ ব্যাক্তি এই আইন প্রনয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন অথবা যেসকল ব্যাক্তি এই বিচারের আইনগত ব্যাপার দেখেছেন তারা যথেষ্ট যোগ্যতা সম্পন্ন ছিলেন না। অথবা, এই বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুন্যালের উপর সরকারের পূর্ন আস্থা ও নিয়ন্ত্রন ছিল। যদি ব্যাপারটা এটা হয়, সেক্ষেত্রে সরকার নিজেই এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যদি উপরের দুইটা অবস্থানের বাইরে অন্য কিছু হওয়া সম্ভব না হয়ে থাকে, তাহলে আমার প্রশ্ন - এর দায় কার উপর বর্তাবে? নিশ্চয়ই আমাদের আইন মন্ত্রনালয়ের উপর। এবং মন্ত্রনালয়ের প্রধান হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীর অবশ্যই এর দায় নেওয়া উচিত এবং এরকম একটা স্পর্শকাতর ইস্যুতে দ্বায়িত্ব পালনে ব্যার্থতাহেতু উনাদের পদত্যাগ করা উচিত।
এখন দেখা যাক, আমাদের মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং আইন মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী এর আগে এই "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার" ইস্যুতে আমাদেরকে কি বলেছিলেনঃ
মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী ঃ আমরা চাই এই বিচার হোক। কিন্তু সেটা আন্তর্জাতিক আইনে হতে হবে।
আইন মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী ঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই হবে!
আমার প্রশ্ন, আমাদের বিরোধী দলীয় নেত্রী যদি আসলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান তাহলে দেশের স্বার্থে কি উনি পারতেন না এই বিচার কিভাবে আইন সন্মত ভাবে করা যায় সেটার এটা ফর্মুলা দেশের জনগনের সামনে অথবা সংসদে তুলে ধরতে? পারতেন না কেন এই বিচারের আইন আন্তর্জাতিক আইনে হচ্ছে না সেটার জন্য আন্দোলন করতে?
আমার আরেকটি প্রশ্ন আইন মন্ত্রী আর প্রতিমন্ত্রীর জন্য। আপনাদের কি সরকারের আইন বিভাগের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মাইকের সামনে গলাবাজী করার জন্য? গলাবাজী আপনারা তারপরও করতেই পারেন। সেটা আপনাদের রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু আপনাদের উপর যেই দ্বায়িত্ব জনগন বিশ্বাস করে তুলে দিয়েছিল, আপনাদের কি উচিত ছিল না সেটা সঠিক ভাবে পালন করা? আপনারা কোন মুখে এখনো মন্ত্রীর চেয়ারে থেকে এটা দেশের জনগনকে বুঝাতে চান যে সরকার আপিল করবে? কেন/কাদের জন্য/কি উদ্দেশ্যে আইনে ফাঁক রেখে এই "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার" কে আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন?
সর্বশেষ আরেকটি ব্যাপারে আমার দৃষ্টি এসেছে, জামায়েত-ই-ইসলামী দলকে রাজনীতি থেকে বহিস্কারের ব্যাপারে। এই ব্যাপারে আমি আমার পরের লেখাতে কিছু শেয়ার করার চেষ্টা করব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন