ভাবছিলাম আতলামী করব না। এই ব্লগে প্রোগ্রামিং কন্টেষ্ট নিয়ে কিছু লিখব না। কিন্তু সেটা কোই আর পারলাম ? =))
আমি একটা কথা আগে বলে নেই, অনেকে অনেক কিছু হইতে চায় জীবনে। আমিও চাইছি। কিন্তু আর যাই চাইনা কেন ... আমি কখনো কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তে চাইছি, এইটা কেউ বলতে পারবে না কখনোই। আমি খালি চাইছি ইঞ্জিনিয়ার হব। কিসের ইঞ্জিনিয়ার হব, অতকিছু চিন্তা করে রাখি নাই। উমমম ... দেশের সাধারন পাবলিকের সাথে এক মত প্রকাশ সরূপ এক কালে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইছিলাম। কিন্তু চাইলেই কি হইব নাকি ? কপালে ছিল সি এস ই ... কি আর করা ?
তো এই পোষ্ট আমার "কি হতে চেয়েছিলাম ছোটবেলায় ?" টাইপের কোন পোষ্ট না। সো, ওই ব্যাপারে প্যাচাল বন্ধ করি। আসল ব্যাপারে আসি। সি এস ই তে ভর্তি হয়ে দেখি একটা বড় ভ্যাজালের পরলাম। সাবাই খালি দুইটা জিনিশ নিয়া কথা কয় খালি। একটা হল C( প্রগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ছি :P) আরেকটা হল প্রগ্রামিং কন্টেষ্ট। আমার অবস্থা হল, যেহেতু কোন ব্যাপারে কোন নলেজ নাই ... তো ট্রাই টু সাক(চেখে দেখা আরকি) এভরিথিং। প্রথম প্রথম আমি অবশ্য খালি পড়তাম !!! কেন পড়তাম সেটা পরে বলতেছি। আমাদের জুন মাসে ইউনিভার্সিটি পুরা একমাস বন্ধ থাকে। তো ওই জুনের আগে আমাদের ফার্স্ট ইয়ারের "প্রগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ইন C" কোর্সের একটা ইনকোর্স পরীক্ষা হয়। তো অই পরীক্ষায় খাইলাম লাড্ডু। কারন আমি একেবারে শুরুতে প্রগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজকে একটা ফানি ব্যাপার ধরে ফালায়ে দিছিলাম। ভাবছিলাম, যাহ ... এইটা কুনো সাবজেক্ট হইলো ? আইবো আর ফু মাইরা জাষ্ট উড়ায়ে দিব। তো এই পরীক্ষায় সব কিছু উড়ায়ে দিতে গিয়া দেখি ... বাকি সব কিছু ঠিক মতই আছে, খালি আমি নিজে এত বড় একটা শরীর নিয়া উড়ে গেছি। কি আজব ব্যাপার। পরে নিজের বোধোদয় হল, নাহ এভাবে উড়ানো যাবে না। তো কি করা যায় ? পায়েল পোলাটা প্রগ্রানিংএ ভাল। ওকে আগেই মাঝে সাজে ধরতাম, কি করা যায় এই ব্যাপারে বুদ্ধি সুদ্ধি নেওয়ার জন্য। তো, ও অনেক আগে আমাকে দিয়া ইউভা নামের একটা সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে দিছিল। তো এইবার যখন ওকে ধরলাম জুনের আগে ... ও বলল, সামনে যেহেতু অনেক বড় বন্ধ। কন্টেষ্ট করে দেখতে পারিস। তো আমি একবার ভাবি শালা নিজে ওইডি করে ... এহন আমারেও ঢুকাতে চায়। তো আমি এখানে এক গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেলাম এখানে। নিজে অনেক ভেবেটেবে ডিসাইড করলাম ... না হয় দেখি গিয়ে কি আছে এতে ... ভাল না লাগলে না করলাম। তো ওই ভাবাই ছিল আমার জীবনের খুব সম্ভবত একি সাথে খুব ভাল এবং খুব খারাপ ডিসিশান। কারন, আমি একদিকে যেমন মজার চ্যালেঞ্জিং একটা জিনিস পাইলাম অপরদিকে নিজেকে একটা খুব কড়া একটা নেশার ফাঁদে ফেললাম। যেই ফাঁদ থেকে এখনো বের হতে পারি নাই। তাই পায়েলকে একি সাথে ধন্যবাদ/বকাঝকা দিলাম।
তো জুন মাসে আমার মনে আছে আমি ওই ইউভা সাইটে প্রায় ৮০টার মত প্রব্লেম সলভ করছিলাম। কন্টেষ্টে খুব ভাল একটা কিছু হইতাম না কখনোই। কিন্তু মনোয়ার স্যার(এই ব্যাক্তি হলেন আমার খুব খুব খুব ইনফিনিট সংখ্যক খুব পছন্দের মানুষ ... আশা করা যায়, উনাকে নিয়ে একটা পোষ্ট দিব পরে, তাই এখানে কিছু না বলি) যোবায়ের(পায়েল), সামাউন(যাকে অনেক আগেই আমি আমার পছন্দের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিছি ... জাষ্ট তখনকার কথা ভেবে লিখলাম), আশরাফ(পরে আমার টিমমেট) ... এদের উৎসাহে কন্টেষ্ট চালায়ে গেলাম। তখনকার মত কন্টেষ্ট করতাম ইন্ডিভিজুয়াল। মানে একা একা। আমার মনে আছে, ফার্ষ্ট কন্টেষ্টে আমি ৬টা প্রোব্লেমের মধ্যে মাত্র একটা অ্যাকসেপ্ট পাইছিলাম। কিন্তু আমি আর ৩টার সলুশানের খুব কাছে ছিলাম। আরো মনে আছে, ওইদিন সন্ধ্যায় পায়লের সাথে দেখা করতে ওর বাসায় গেছিলাম। তখন ও আমাকে দেখা মাত্র বলছিল, আরে তুই তো আজকে ফাটায়ে দিলি(!!!) ... আমি তো গেলাম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে। মনে মনে অনেক হিসাব কষছি এই ভেবে যে, তবে কি কন্টেষ্টের পরে আমার আর ২/১টা অ্যাকসেপ্ট পেলো ?( =)) =)) =)) ব্যাপার হল আমি তখনো তেমন কিছু বুঝতাম না এই ব্যাপারে ...)। তো পরে ও বলল, আরে প্রথম কন্টেষ্ট হিসেবে তো তুই ব্যাপক করছিস(পুরাই চাপা, এই ছেলেটা এইরকম অসংখ্য চাপা মেরে তখন আমার উৎসাহে জোয়ার দিত)।তো আমিও মদনের মত ভাবলাম, আসলেই মনে হয় এইটা কুপানো পার্ফরমেন্স। তো যেহেতু একবার কুপায়ে দিছিই ... সামনে না জানি আর কত কুপানি বাকি আছে রে ... !!! এখন বুঝতে পারছেন আমি কতটা না বুঝে অন্ধের মত কন্টেষ্টে ঝাপ দিছিলাম !!!
আরেকটা ব্যাপার ছিল তখন, যেটা আমাকে কন্টেষ্টে উৎসাহ দিত। যারা কন্টেষ্ট করত, তারাই গলা উচায়ে ডিপার্টমেন্টে হাঁটত। অন্যরা এভাবে গলা উচায়ে হাটত না। তো আমারও গলা উচাইতে ইচ্ছা হইল। সো, ফলাফল সরূপ আমি হয়ে গেলাম কন্টেষ্টাইন।
এ তো গেল একদম শুরুর কথা। কিছু দিন পর মানে যখন আই.ছি.পি.ছি.(icpc) র জন্য সবাই প্রিপারেশান নিচ্ছিল। তখন দেখলাম কন্টেষ্টের আরেক রূপ। যেটাকে আবার সবাই কিনা বলে "টিম কন্টেষ্ট"। এখন পরলাম মহা মুছিবতে। কার সাথে টিম করবো ? কি ভাবে করবো ? আমি তখন নিজেই তেমন কিছু(বলা ভাল মোটেই কিছু) পারি না। আমাকে দলে নিবে কে ? উপরে একটু ভুল বললাম। ওইটা তখন icpc ছিল না। ছিল এমনি কোথায় জানি ... আচ্ছা মনে পরছে, ওইটা ছিল AUST-NCPC কন্টেষ্টের সময়কার ঘটনা। তো যেহেতু আমাকে নেওয়ার মত কেউ ছিল না(অনেকেই তখন সমানে ভাব নিছে ... পরে মনে রাখি নাই। মনে রাখলে জবাব দেওয়ার মত পজিশান আমিও এক সময় পাইছিলাম) আমি অনেকটা নিজেই একটা দল করলাম। এখানে একটা ব্যাপার, যেটা আমি এই পরিস্থিতি তে শিখছি ... নিজে ভাল হলে, আপনাই সবাই তাকে দলে নিবে। কিন্তু ভাল দল পেতে হলে, নিজেকে শুধু ভাল হলেই চলবে না ... নিজের স্বভাব ভাল করতে হবে। ( =)) =)) =)) অনেক গম্ভীর কথা কয়ে ফেললাম :P)। তো তখনকার মত একটা সমাধান পেলাম, শুভ। শুভর পরিচয় আমি এভাবে দিতে পছন্দ করি "আমার বন্ধু শুভ"। আসলেই তাই। আমার যে খুব কম কিছু ট্রু ফ্রেইন্ড আছে - শুভ তাদের একজন। ওকে নিয়ে পরে লিখব। তো যেটা হল, আমাদের ক্লাশের থেকে কয়েকটা টিম আসল। রিদোয়ান-সাকিন-যোবায়ের মিলে একটা টিম। সামাউন জানি কাকে নিয়ে একটা টিম করছিল(এই ছেলে এত বেশী টিমের মেম্বার ছিল যে কখন কোনে টিমে ছিল বলা মুশকিল)। সাদ-তামিম-মিশু একটা টিম ছিল। আশরাফ-মারুফ-তুহিন মে বি একটা টিমে ছিল। মুন্না মনে হয় সামাউনের সাথে ছিল তখন। আর আমি-শুভ ছিলাম একটা টিম। তো আমার মনে আছে ফার্ষ্ট টিম কন্টেষ্টে আমরা একটাও সলভ করতে পারি নাই। আশরাফরা জানি কেমনে কেমনে একটা করে ফেলছিল(পরে আশরাফের থেকে ওই সলভের জন্য কয়েকদিন ভাব সাব দেখতে হইছিল মনে আছে :P)।
AUST কন্টেষ্টের পরে পানি অনেক বইছে। আশরাফও ওর টিম থেকে বের হয়ে আসছে, শুভও কি কারনে জানি কন্টেষ্ট ছেড়ে দিছিল, যোবায়ের গেল একটা টিমে। আসিফ আসল রিদোয়ানদের টিমে। এই তখন অবস্থা। তো এমন সময় আমি আবার আবিষ্কার করলাম আমার কোন টিম নাই। আমার মেম্বার সার্সিং। শেষমেষ কাউরে না পাইয়া ম্যাডকে নিয়ে একটা টিম করলাম। এখানে একটা মজার ঘটনা আছে। আমি আর ম্যাড কন্টেষ্ট করতে ঢুকব কন্টেষ্ট রুমে, তখন ম্যাড আমাকে বলে, ওই আমার তো খালি লজ্জা লাগছে। মানুষের কন্টেষ্ট রুমে ঢুকতে ভয় করতে পারে, মানুষ নার্ভাস হইতে পারে, আনইজি ফিল করতে পারে ... কিন্তু লজ্জা কেমনে পায় আল্লাহই জানেন। তো ওকে নিয়ে ফার্ষ্ট কন্টেষ্টে আমার মনে আছে আমরা একটা প্রোব্লেম সলভ করছিলাম। ওইটা আমার মনে আছে ইউভার ৪০০/৪০১ নাম্বার প্রোব্লেম ছিল। ওইটা আমার কমন প্রোব্লেম ছিল।(মুশাকে করছিলাম) তো ওইটা করলাম। রিদোয়ানরা তখন আমাদের ডিপার্টমেন্টের উজ্জ্বল ভবিষৎ খেতাব প্রাপ্ত টিম ছিল। ওরাও ওইটা করছিল, কিন্তু আমাদের পরে। আর ওদের ওইটায় মনে হয় পেনাল্টি ছিল। ওরা আর করতে পারে নাই ওইদিন। ফলাফল, আমরা ওদের থেকে উপরে ছিলাম ওইদিন(:D :D)। পরে আমাদের সাথে মামনি(বাংলার ঠোঙ্গার রানী খ্যাত নায়লা) একদিন করছিল। পরে আমাদের পার্মানেন্ট মেম্বার হিসেবে আসল সাকিব। হ্যা হ্যা এই সেই সাকিব, যে কিনা এখন ম্যাড সাকিব হয়ে গেছে (:P :P)। তো আমাদের লাইন আপ শেষমেষ দাড়ালো আমি-ম্যাড-সাকিব এইটাইপের।
এর মধ্যে শুভ আবার ব্যাক করল। নরমাললি টিম হয় তিন জনের। তো আমরা ভাবলাম আমরা তো ছোট, চার জনে করলে কিছু হবে না। সেই মত আমরা করতে থাকলাম। আমাদের মধ্যে সলভিং এরকম ছিল যে, শুভ ম্যাথ/জিওমেট্রি দেখত, ম্যাড-সাকিব(আই মিন ম্যাড আর সাকিব) দেখত সিমুলেশান, আমি বাকি সব(মানে ঘোড়ার ডিম :P আসলে সব কিছুই ট্রাই করতাম, যদিও পারতাম না কিছু)। এর মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে যায়। আশরাফ আমাদের টিমে আসে। ফলাফল, আমাদের টিমটা মুটামুটি ৫ জনের একটা আড্ডাবাজি গ্রুপ হয়ে যায়। খালা-মামনি একসাথে করত তখন। তো যেটা তখন হত, খালা-মামনিও কন্টেষ্ট শুরু হওয়ার দেড়-দুই ঘন্টা পরে চলে আসত। আর আমরা সবাই মিলে কন্টেষ্ট ফেলে আড্ডা মারতাম। অবশ্য, তখন ওই টিমের মামনি আর আমাদের টিমের ম্যাড কোন প্রোব্লেম হয়ত একসাথে ট্রাই করত। আর আমরাও এই আশায় বসে থাকতাম যে, ওরা যদি পেরেই যায় তাইলে তো ২টিমেরই হইল (:D :D :D)। আমরা এইরকম আড্ডাবাজী করে শেষে ইফতারি করে(তখন প্রতিদিন কন্টেষ্টের শেষে ইফতারি করাইত আমাদের ডিপার্টমেন্টে :D :D :D) বাসায় চলে জাইতাম আরকি। এই অবস্থা অবশ্য বেশী দিন ছিল না। পরে আমরা আবার সিরিয়াসলী কন্টেষ্টে ব্যাক করছি সেকেন্ড ইয়ারের শুরুতে। তখনকার লাইনআপ আমি-শুভ-আশরাফ।
এ সবই ছিল আমার কন্টেষ্টের শুরুর দিকের কথা। অনেক কথা বাদ পরছে ডেফিনেটলি। সব কিছুতো আর পুরা মনে নাই। সব ঘটনা এখানে বলাও সম্ভব না আসলে। অনেক বড় হয়ে যাবে। আমি জাষ্ট আর দুইটা ঘটনা বলব।
একদিন দেখি আশরাফ খালাকে ফ্লাডফিল দেখাচ্ছে। তো আমিও ওইটা ওর থেকে দেখে নিলাম। তো ওইদিনের কন্টেষ্টে একটা ফ্লাডফিল প্রব্লেম ছিল পানি-ভাত টাইপের। তো অনেক কষ্টে হইলেও ওইটা করছিলাম আমি আর সাকিব মিলে সেদিন। খুব মজা পাইছিলাম ওইটা অ্যাকসেপ্ট পেয়ে সেদিন। আরেকটা ঘটনা, তখন আমাদের ক্লাশের খালা-খালু জুটি হয়ে গেছে অথবা হবে হবে করছিল আরকি। আশরাফ তখন আমার সাথে কন্টেষ্ট করে। ওর সাথে সামাউনের একটা ব্যাপারে ঝামেলা হইছিল। তো হুট করে দেখি সামাউন তার নিউ টিম নিয়ে আসল। তার টিমমেম্বার খালা-মামনি। আমাদের আশরাফের দিকে তখন তাকানো যাচ্ছিল না। আহারে ... বেচারা !!!
এই লেখা এখনি শেষ করা দরকার। অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। ভাবছিলাম শুধু কন্টেষ্টের শুরুর দিককার কিছু স্মৃতি রোমন্থন করব কিছু। কিন্তু লিখে ফেললাম অনেক কিছু। কেউ যদি পড়ে, তাইলে বিরক্ত হতে পারে এই ভেবে এখানে শেষ করে দিলাম। শেষ করার আগে বলব, শুরুর দিককার দিনগুলোয় পায়েল, আশরাফ, সামাউন ... অনেক অনেক হেল্প করছে। অনেক সময়ই অনেক কোড দেখে দিছে। অনেক ধন্যবাদ তাদের। মনোয়ার স্যার অনেক উৎসাহ দিতেন। জান ভাইও অনেক উৎসাহজনক কথাবার্তা বলছেন। জামি ভাই, শিপলু ভাই, আনা আপু ... এরাও অনেক হেল্প করছেন। উনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন।
ভালো লাগলো :P
উত্তরমুছুনখালা-মামনি একসাথে করত তখন। =))
উত্তরমুছুনচমৎকার। অন্যান্য ব্লগে দিতে পারিস
উত্তরমুছুন@শাফায়েত - ভাল লাগাছে জেনে ভাল লাগল
উত্তরমুছুন@বিবর্ণ - আসলে লেখালেখির হাতটা আরেকটু ভাল হোক। এই জন্যই এখন স্বল্প পরিসরে লিখছি। অ্যানিওয়ে, অনেক ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুন