বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

দৈনিক কথপকথন, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আমাদের দেশটাই এমন হয়ে যাচ্ছে, যেটা হবার কথা না সেটা বাধাহীন ভাবে হয়ে যাচ্ছে ... আর যেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক, সেটা পাওয়ার জন্য অন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়। কখনো সেই আন্দোলনে সফলতা আসে, কখনো না। দুঃখের বিষয় হল, আন্দোলনে সফলতা আসা কিংবা না আসা ... এটা নিয়ে আমরা সবাই আবার চি্ন্তিত নই। যার যেটা নিয়ে চিন্তা করলে লাভ আছে, সে সেটা নিয়েই চিন্তা করি।

ধরা যাক শিক্ষা-ক্ষেত্রে VAT এর ব্যাপারটা। যাদের ঘাড়ে এই VAT এর বোঝা পরলো, তারাই চিন্তিত হল বেশি। তাদেরই কিছু বন্ধুবান্ধব যারা সরকারী সুবিধায় পড়ালেখা করছে, অত্যাধিক সুবিধাপ্রাপ্তির লজ্জায়ই কিনা তারাও একটু মিনমিনে কন্ঠে সমর্থন দিল। কিন্তু ব্যাপারটা যেরকম সবার মাথাব্যাথার কারন হবার কথা ছিল, সেরকমটা কিন্তু দেখা গেল না।

এরপর ধরেন SSC/HSC পরীক্ষার মত পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র গনহারে ফাঁস হবার ব্যাপারটা। আমরা কি সহজ ভাবেই না ব্যাপারটা মেনে নিলাম। তাই না? এই ইস্যুতে খুব একটা আন্দোলন পর্যন্ত হল না। এটাতে তো খালি চোখে ক্ষতিগ্রস্থ হবার কেউ নেই। কেউ নিশ্চয়ই দাবী করতে পারে না যে সে প্রশ্ন পরীক্ষার আগে পায়নি বলে পরীক্ষায় খারাপ করেছে। কিন্তু এতে আমাদের সমাজের কতটা গভীরে ঘুন ধরে গেছে, এটা একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেল। সমাজ ব্যাবস্থার মৌলিক একক যদি পরিবারকে বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে আমার প্রশ্নঃ একটা ছেলে বা একটা মেয়ে যখন পরীক্ষার আগে প্রশ্ন সংগ্রহ করল ... তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাপারটা কিভাবে গ্রহন করতে পারল? আমাদের সমাজটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে আসলে।

এত কথা যেই কারনে বলা লাগলো। আজকে দেখলাম ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে যেই আন্দোলন হচ্ছিল ... সেখানে পুলিশ নির্দয়ভাবে লাঠিপেটা করল। প্রশ্নপত্র যে ফাঁস হয়েছে সেটা সরকার পরীক্ষার দিনই প্রশ্ন ফাঁসকারীদের আটকের মাধ্যমে প্রমান করেছে। এখানে এই পরীক্ষা বাতিলের দাবীতে আন্দলনের তো কোন দরকারই ছিল না, সরকারেরই তো উচিত ছিল নিজে থেকে এটা বাতিল করা। কিন্তু ওই যে শুরুতেই বললাম, "আমাদের দেশটাই এমন হয়ে যাচ্ছে, যেটা হবার কথা না সেটা বাধাহীন ভাবে হয়ে যাচ্ছে ... আর যেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক, সেটা হওয়ানোর জন্য অন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়।"

আমাদের দেশটা কিন্তু এরকম ছিল না। যেকোন পাবলিক পরীক্ষায় আগেও হয়ত প্রশ্ন ফাঁস হত, কিন্তু সেটা ছিল চোখের আড়ালে। চোরের মত করে একটা শ্রেনী এই কাজটা করত। আর এখন? SSC/HSC র প্রশ্ন ফেইসবুকের গ্রুপে পাওয়া যায়। প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে পাওয়াটাই এখন স্মার্টনেস। প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে পেয়ে এখন কিন্তু আর কেউ চোরের মত মুখ লুকায় না, বরং বুক ফুলায়ে গর্ব করে বলে, "প্রশ্ন যেইরকম কঠিন ছিল, তাতে প্রশ্ন ফাঁসের কোন বিকল্প নেই"।

অনেক আগে খুব কষ্ট নিয়ে একটা কথা বলেছিলাম, এইদেশে অনার্স পাশকরা একটা ছেলে/মেয়ে কেন দেশে পরে আছে সেই কৈফিয়ত তাকে দিতে হয়। আমার মনে হয় আমি ভুল বলেছিলাম। আমাদের দেশটা বিদেশীদের নয়, ওরা কখনোই এসে এই দেশটাকে ঠিক করে দিয়ে যাবে না।

মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০১৪

সাকিব, ষড়যন্ত্রের শিকার ?

যেই বখাটে ছেলেকে সাকিব ধোলাই দিয়েছিল, ইভ টিজিং এর জন্য ... তার বাবা-মা নাকি সমাজের প্রতিষ্ঠিত মনুষ, আর সেই ছেলে নাকি লন্ডনে পড়াশুনা করে। সো, সেই ছেলের পক্ষে নাকি সাকিবের বৌকে টিজ করা সম্ভবই না। খালেদ মাহামুদ সুজন সাহেব নাকি এটা একাত্তর টিভিতে দাবি করেছে। ব্যাপারটা এরকম, কারো বাবা মা যদি সমাজে প্রতিষ্ঠিত এবং ক্ষমতাধর হয়ে থাকেন আর তাদের সন্তান যদি ইংল্যান্ড আমেরিকাতে পড়াশুনা করতে যায় ... সেই সন্তানের মত মাছুম সন্তান দুনিয়াতে আরেকটি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

পুরো সেট-আপটা একটু যদি আমরা একটু দেখার চেষ্টা করি এরকম পাব। সাকিব তার বৌকে ইভ টিজিং এর জন্য একটা বখাটে ছেলেকে পিটাইছে। সেই ছেলে কিন্তু সাথে সাথেই জামিনে ছাড়াও পাইছে। সাকিবকে এই ব্যাপারটার জন্য বোর্ড তলব করছে, তার কাছে ব্যাপারটা জানতে চাওয়া হইছে। এই ব্যাপারে বোর্ড থেকে কোন রেজাল্ট আমরা জানতে পারিনি। এর মধ্যে সাকিব আকরাম খানের থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে দেশের বাইরে গেছে লীগ খেলতে। বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, নতুন কোচের কাছে নাকি সাকিব বলছে তাকে বিদেশে খেলতে না দেওয়া হলে সে দেশের হয়ে আর খেলবে না। যেই কোচ এই দাবী করছে, আমি জানি না যে সে খেলোয়ারদের সাথে এখন পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক মিটিং করেছে কিনা। এরপর বোর্ড থেকে সাকিবকে দেশে তলব করা হয়। এবং আমরা দেখলাম সাকিব সাথে সাথেই দেশে ফেরত চলে আসে। কিছু পত্রিকায় অবশ্য দাবী করা হয়, ঘটনা এত ঘোলা হয়েছে বলে সাকিব নাকি চলে আসছে। এবং দেশে ফেরত আসার পরে বেশ দ্রুততার সাথেই সাকিবকে ছয় মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ব্যান করা হয়।

ঘটনা গুলিকে আমি যেভাবে দেখছি, সাকিবকে একটা ভয়ংকর ফাঁদে ফেলা হয়েছে। প্রথম কথা, সাকিব যদি কোচের কাছে দাবী করেই থাকে যে বিদেশে খেলতে না দিলে সে বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে অবসর নিবে তাহলে সে ভুল করেছে। এজন্য সে শাস্তি পেতেই পারে। কিন্তু ব্যাপারটা কি প্রমানিত হয়েছে এখন পর্যন্ত ? আর নতুন আসা একজন কোচ একটা দাবী করলেই কি আমরা সাথে সাথে সেই দাবী মেনে নিব ? এখানে মিস কমিউনিকেশনের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। প্রথমত কোচ একেবারেই নতুন, সো, তার নাম ব্যাবহার করে বোর্ড একটা প্লাটফর্ম তৈরি করার চেষ্টা করছে না তো ? কারন, কোচ যদি এরকম মেইল বোর্ডের কাছে করেই থাকে, তাহলে সেটার একটা তদন্ত হতে হবে। সেখানে সাকিব উপস্থিত থাকবে, কোচ থাকবে। কিন্তু যেই কোচের দাবীর উপর ভিত্তি করে সাকিবকে দোষী প্রমানিত করা হল, সেই কোচকে কি আমরা কেউ দেখেছি ? দেখিনি। সেই কোচের সাথে কথা না বলে কিভাবে বোর্ড এই সীদ্ধান্তে গেল, যে সাকিব অন্যায় করেছে ? এর আগেও বাংলাদেশের অনেক কোচই চলে যাওয়ার সময় বোর্ডের বিরুদ্ধে অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে গিয়েছিল। সেই সব অভিযোগের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছিল ? তখন কোথায় গিয়েছিল আইন কানুনের এইসব দাবী ?

সাকিবকে কোন অপরাধের জন্য এই শাস্তি দেওয়া হল ? ভারতের টুর্নামেন্ট চলার সময়ের ওই ইভ টিজিং এর ঘটনার জন্য? নাকি দেশ থেকে NOC না নিয়ে বিদেশে খেলতে গিয়েছে, সে জন্য ? নাকি সাকিব দেশের হয়ে আর খেলবে না এরকম হুমকী দিয়েছে সে জন্য ? আমি কোথাও কিন্তু স্পেসিফিক কোন কথা পেলাম না, যে এই কারনেই সাকিবকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বোর্ড প্রেসিডেন্টের প্রেস কনফারেন্স অনেকটা এরকম, "ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ ... সাকিব অ্যা্রোগেন্ট ... ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ ... সাকিব আমাদেরকে তোয়াজ করে না, আমাদের কোন কথা শুনে না, আমাদেরকে তেল দেয় না ... ভ্যাঁ চ্যাঁ চ্যাঁ ... সাকিব টেকা কামায় অনেক, আর কামাতে দিব না ... ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ ... সে আগে থেকেই অনেক অন্যায় করছে ... হুঁ হুঁ হুঁ ..."। এই যায়গাটা পরিষ্কার করা উচিত আগে, কেন সাকিব এই শাস্তি পেল। সব থেকে বড় কথা, কোন যায়গাতে কোন অপরাধের জন্য কোন খেলোয়ারকে শাস্তি দেওয়া হলে, সাথে সাথেই জানিয়ে দেওয়া হয়, সেই খেলোয়ারটি কত দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। এরকম কি কিছু বোর্ড প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্বেলনে ছিল? আমার জানা নাই। তবে কি এটা অনেকটা কোর্ট মার্শালের মত হয়ে গেল না ? নাকি কোর্ট মার্শালেও শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করা যায় ? আর সাকিব অ্যা্রোগেন্ট কোন দিক থেকে ? সে বোর্ডের কর্তা ব্যাক্তিদেরকে তেল মেরে চলে না, সেই জন্যে? আর সাকিব যদি সত্যি সত্যি অ্যা্রোগেন্টই হয়ে থাকে, আমি তো বলবো, আমাদের দেশে এরকম সাকিবের মত "অ্যা্রোগেন্ট পারফরমার" দরকার আছে।

এরপর আসি বোর্ডের নিয়ম না মেনে NOC না নিয়ে দেশের বাইরে খেলতে যাওয়া প্রসঙ্গে। সাকিব দেশে ফিরে টিভি ক্যামেরার সামনে দাবী করেছে যে আকরাম খান নাকি তাকে মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই সে বিদেশে খেলতে চলে গিয়েছে। ব্যাপারটা যদি অন্যায়ই হয়ে থাকে, তাহলে তো আকরাম খানও অন্যায় করেছে। কারন মৌখিক অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা তো তার নেই। তাহলে আকরাম খানেরও কি বিচার হওয়া উচিত না ?

এবার আসি শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে। কোন একটা ঘটনা ঘটলে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। সেই তদন্ত কমিটির সুপারিশক্রমে শাস্তির একটা প্রসঙ্গ আসে। এখানে সেরকম কোন প্রসিডিউর ফলো করা হয়েছে কি ? সাকিব দেশে আসলো, পরের দিন তাকে শাস্তি দিয়ে দেওয়া হল। এখানে আমরা একটা ব্যাপারই আইডিন্টিফাই করতে পারি, বোর্ড প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমাহীন, এবং সে চাইলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। এটা কিন্তু আল্টিমেটলি আমাদের দেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর।

এবার আবার ওই ইভ টিজিং এর প্রসঙ্গে আসি। এটা কিরকম কথা হতে পারে যে একজন ব্যাক্তির বাবা মা সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষ হলেই আর সেই ব্যাক্তি যদি বিদেশে পড়াশুনা করে, তাহলে সে কখনোই ইভ টিজিং করতে পারবে না ? তবে কি সমাজে প্রতিষ্ঠিত ওই বখাটে ছেলের পরিবারের অদৃশ্য চাপ আছে সাকিবের বর্তমান ছয় মাসের সাসপেনশনের পিছনে ?

ছয় মাসের সাসপেনশন, এটা কোন মাত্রার অপরাধের জন্য আসতে পারে ? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর সাথে যোগ করেছে, এখন থেকে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়ার কোন পন্যের বিজ্ঞাপনের মডেল হতে হলে তাকে বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে। এরকম কোন আইন বিশ্বে আর কোন দেশের কোন ধরনের খেলাধুলায় আছে কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আধুনিক যুগে যে দাস প্রথা চালু করতে যাচ্ছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

সাকিবের প্রতি বোর্ড এখন পর্যন্ত যেই সীদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা একেবারেই আত্মঘাতী। সাকিবের বর্তমান শাস্তির মেয়াদ শেষ হতে হতে ২০১৫ এর বিশ্বকাপ চলে আসবে। এরকম একটা সময়ে এসে এধরনের সীদ্ধান্ত যখন দেশের সেরা খেলোয়াদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়, সেটা কতটা যৌক্তিক আর কতটা নিজের ব্যাক্তিগত আক্রশের বহিঃপ্রকাশ ... অনুমান করে নেওয়াটা খুবই সহজ।

গেল দুই দিনে ফেসবুকে এই ব্যাপারটাতে প্রচুর পরিমান পোষ্ট এসেছে। অনেকেই মনে করে সাকিবের উচিত দেশের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেওয়া। মজার ব্যাপার হল, এরকমটা যদি সাকিব আজকে আসলেই করে থাকেন (দেশের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন) তাহলে কিন্তু বোর্ডের ওই তথাকথিত যদু মধুদেরই জয় হবে। তখন তারা বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে, "আমরা আগেই বলছিলাম, ও দেশের হয়ে খেলতে চায় না !" বরং আমাদের উচিত এই সীদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। যে যার অবস্থান থেকে যদি আমরা প্রতিবাদ করতে পারি এই বোর্ডের এই অন্যায় আচরনের, আমি বিশ্বাস করি সাকিবকে আমরা খেলায় ফিরিয়ে আনতে পারবো।

#BringBackShakib

রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৪

৪৮ তম সমাবর্তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (২য় পর্ব)

সকাল ১১.৩০
- দোস্ত তুই কোথায় ? সমাবর্তনে আসবি কখন ?
- আমি একটু দোকানে যাই। চলে আসবো ২টার আগেই।
দুপুর ১.৩০
- দোস্ত তুই কোথায় ?
- আমি বাসার নিচে নামছি একটু। রেডি হয়ে আসতে যতক্ষন লাগে।
- তুমি যেহেতু মেয়ে মানুষ না ... আশা করি বেশি সময় লাগবে না রেডি হইতে।
দুপুর ৩.০০
- দোস্ত তুই কোথায় ?
- এইতো, বাসা থেকে বের হচ্ছি
বিকাল ৪.০০
- দোস্ত, তুই আসবি না ?
- আমি তো চলে আসছি ... এই আর তিন চার মিনিট লাগবে।


- আচ্ছা, কাল এসে কি করবো ? আজকেই তো ছবি টবি তুলে ফেললাম !
- তাই তো। কাল এসে কি করবো ?

- আমরা আজকে কোথায় খাইতে যাব ?
- চল গুলশান যাই !
- প্রত্যেকদিন অফিস করতে ওইখানে যাস ... তাই বলে আজকেও ?
- না না ... গুলশান অনেক দূর হইয়া যাবে !
- চল বার্ড'স আই ভিউতে যাই।
- ওইখানের খাওয়া ভাল না !
- চল ফ্ল্যম্বিতে যাই ... বুফেই খাই !
- ফ্ল্যম্বি তো আর গুলশানে না ... তাই না ?
- দোস্ত, এখন গুলশানে যাবি ? ম্যালা জ্যাম !
- চল বেইলী রোডে যাই।
- চল এখানে যাই ...
- চল সেখানে যাই ...
- চল হারিয়ে যাই ...
...
...
...
...
১৫/২০ মিনিট এভাবে তাহাদের আলোচনা চললো। এরপর ...
- চল গুলশান যাই !
- চল বার্ড'স আই ভিউতে যাই।
- চল ফ্ল্যম্বিতে যাই ... বুফেই খাই !
- চল এখানে যাই ...
- চল সেখানে যাই ...
- চল হারিয়ে যাই ...
...
...
...
শেষ পর্যন্ত ৩০/৪০ মিনিটের আলোচনা শেষে আমরা বার্ড'স আই ভিউ রেষ্টুরেন্টে গেলাম।

- দোস্ত তোর ব্যাগটা সুন্দর হইছে। কোরিয়া থেইক্কা আনছিস ?
- হু।
- তয় দোস্ত ব্যাগটা মেয়েদের মনে হচ্ছে ! :P
- (তাহার গার্ল ফ্রেইন্ড) দেখছো, ও বলছে ব্যাগটা মেয়েদের! আমাকে দিয়া দেও !

- এই, আজকে আমাকে কেমন লাগছে ?
- খুব সুন্দর। এরকম ফরমাল থাকলেই তো পার।
- ধুর। প্রত্যেক দিন কি এরকম থাকা যায় নাকি ? আচ্ছা, সত্যি করে বল তো, কেমন ভাল লাগছে ?
- ইসসস ... খালি ভাল লাগছে শুনতে মনে চায়, না ? :P

- ওই জানিস, আজকে অমুকে না তার হবু শ্বাশুড়ির মাথায় সমাবর্তনের টুপির ফিতা ঠিক কইরা দিছে !
- কস কি ! সত্যি নাকি ?
- হ ... ছবি আছে ! দ্যাখ দ্যাখ !

- দোস্ত তোর ফার্ষ্ট ইয়ারের স্ট্যাটিসটিক্স পরীক্ষার কথা মনে আছে ?
- কোন কথাটা যেনো দোস্ত ?
- ওই যে ... তুই পরীক্ষা দিয়া বের হইয়াই চিল্লায় বলতেছিলি, "আজকে দিছি সব বানায়ে লেইখ্যা !" তখন তোর পাশ দিয়া একজন ম্যাডাম যাচ্ছিলেন। সে তোর কথা শুনে বলতেছিলেন, "বানায়ে লিখলে লাভ হবে না !"
(এখানে একটা কথা বলে রাখি, আমাদের স্ট্যাট স্যার যেই নোট সরবারোহ করেছিলেন সেটার প্রথম প্রশ্নটা ছিল "What is statistics ?" আর সেটার উত্তরের প্রথম লাইন ছিল অনেকটা এরকম যে, "It is very hart to define statistics in a few words"। এরপর থেকে কোন পরীক্ষায় কোন আনকমন ডেফিনেশন মার্কা প্রশ্ন আসলেই আমি লিখা শুরু করতাম, "It is very hart to define অমুক in a few words")

- ওই, তুই ড্রেস রিহার্সালে যাস নাই ক্যান ?
- ধুর! গরমের মধ্যে ভিতরে যাইতে ইচ্ছা করে না !
- তুই না ফার্ষ্ট হইছিস ? তোর নাম ধরে ডাকলে এইখান থেকে বলবি, "ইয়েস স্যার" ?
- হা হা হা ! হু !

- এই যে ... তুই যে তোর গার্ল ফ্রেইন্ডকে (যে DU তে পড়ে না) এইখানে নিয়া আসছিস, এইটা কি ঠিক হইলো ?
- ক্যান ? সমস্যা কি ?
- তোর পোলাপাইন এই ছবি দেইখা কি কইবো ?
~ (পাশ থেকে আরেকজন) ক্যান ? ওর ছেলে মেয়ে তো ভাববে ওদের বাবা-মা সব সময়ই এক সাথে ছিল !
- হ ! হইছে কাম ! তখন যদি আমার পোলা কয়, "আব্বা, আমার বউ কই তাইলে ?" :P

অনেক অনেক ছবি তোলার মধ্য দিয়ে আজকে সমাবর্তনের ড্রেস রিহার্সালের দিনটি শেষ হল। অনেক অনেক ছবি তোলার মধ্যে আমাদের বেষ্ট পার্ট ছিল মনে হয় যোবায়ের মোবাইলের ক্যামেরায় তোলা সেলফি গুলা। কত অদ্ভুট টাইপের যে সেলফি আমরা তুললাম আজকে ! সব শেষে বন্ধুরা মিলে ডিনারে গেলাম বার্ড'স আই ভিউতে। খাবার মুটামুটি, কিন্তু যায়গাটা খুবই ভাল। শুধু বসে থাকার জন্য হলেও এক-আধবার যাওয়া যায় এরকম যায়গায়। যাই হোক, কাল সমাবর্তনের শেষ দিন। ভালয় ভালয় শেষ হোক সমাবর্তন, এই প্রত্যাশায়। :)


শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৪

৪৮ তম সমাবর্তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১ম পর্ব)

... টাই কিভাবে বাধঁতে হয় জানেন ? এই মুহুর্তে এটা জানাটা আমার জন্য খুব জরুরী একটা ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ্পা মারা এই টাই কেবল সমাবর্তনের দিনেই পরা সাজেঁ ... এখন টাইটা না বাধঁতে পারলে হবে ?

ওই, আমরা ডিনার কবে করবো ? আসবি তো ? আসবি না ক্যান ? লেট হবে ক্যান ? ওই দিন ক্যান ? ওই দিন না ক্যান ? তুই খারাপ ... তোর বাসায় ৯টার মধ্যেই ঢুকতে হবে ক্যান ?

দোস্ত আজকে আমার পায়ের মাপের জুতা পাইছি ! হুহাহাহাহা ... একটু বেশিই পরে যাবে, কি করবো বল ! পাচ্ছিলাম না তো ! যখন ওকে মন খারাপ করে বললাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ মারা এই টাই তো সমাবর্তনের দিনে না পরলে আর পরা হবে না ... ও না কেমন কেমন করে ম্যানেজ করে ফেললো জুতাটা ... বুঝলি ! আমি আর না করলাম না !

আব্বা, তোমাকে না বললাম ৬ তারিখ ফ্রি থাকবা ? আমরা সমাবর্তনের ছবি তুলবো ! তুমি অফিসে বললে কি হইত ? একটা দিন ম্যানেজ করতে পারলা না ? আচ্ছা থাক ... সমস্যা নাই, ৭ তারিখ ফ্রি থাইকো, আমি ফোন করলে ইউনিভার্সিটিতে চলে আইসো।

- আমি আর তোর ছবি তুইলা দিমু না !
- ক্যান ? দিবি না ক্যান ?
- এত কষ্ট কইরা মানুষজনের ছবি তুলি, কেউ ফটো কার্টেসি দেয় না ! কার ভাল লাগে বল ?
- আচ্ছা যা, দিয়ে দিচ্ছি। আর আমার ছবি না তুলে তোর উপায় আছে বল ? আমি না তোর বেষ্ট মডেল ? :P

- ওই দোস্ত, আমি তো গাউনের সাথে গলায় পরার ওইটা পাই নাই !
- দোস্ত আমি পাইছি, কিন্তু ও পায় নাই ! এখন আমারটা ওরে দিয়া দিছি। বেচারী মন খারাপ করবে !
- আচ্ছা, তাইলে ভিকটিম খালি আমি একাই না ! :D
- হ ... যখন কমপ্লেইন করলাম লোকটা যা পার্ট নিল না ! হুদাই ! আজাইরা !

- দোস্ত অনেক ছবি তোলাতুলি হইছে। চল এখন খাইতে যাই।
- কই যাবি ? পুরান ঢাকায় ?
- চল, নিরবে গিয়া ভাত খাই ! অনেক দিন কোরিয়া ছিলাম, শান্তি মত ভাত খাওয়া হয় না !
- দোস্ত অনেক দিন স্টারে যাই না ... চল ধানমন্ডি স্টারে যাই। ওইখানে ভাতও পাবি।
- চল চল ! ওইখানে অনেক দিন সবাই মিলে যাওয়া হয় না।

- দোস্ত, তোরা আজকে সবাই মাথার এই টুপির সাথে ম্যাচিং ড্রেস পরে আসছিস ক্যামনে ?
- ক্যামনে বলমু ... আমি তো জানতাম না মাথার টুপির সাথে এইটা মিলে যাবে।
- সমস্যা নাই, এইটার সাথে ম্যাচিং করে জামা কিনবনি।

- ওইখান থেকে নরমাল হইয়া হেঁটে আসো। আমি ছবি তুলতে থাকব।
- না না ... এভাবে হচ্ছে না। তুমি নরমালি হাটঁছো না ! রকিব ... তুই একটু হাইটা আয় তো। তোকে ছাড়া হবে না।
- এইতো সাব্বাস, বাঘের বাচ্চা। হইছে !

- আমরা পরে আইসা ভাল করছি না ? কোন লাইনে দাড়াইতে হয় নাই।
- সকালে আইসা মানুষজন আজকে ধরা খাইছে। ভাল হইছে।
- আচ্ছা, দ্যাখতো ... রবিবার মিশুক ভাইকে পাওয়া যাবে ছবি তোলার জন্য ?
~~ হ্যালো মিশুক ? তুই রবিবার ছবি তুলে দিতে পারবি আমাদের ?
~~ আমার তো ওইদিন অফিস আছে। আর আমার তো ক্যামেরাও নাই।
~~ ক্যামেরা প্রবলেম না। ক্যামেরা আছে ... তোর সময় থাকলে বল।
~~ নারে, অফিসে যাইতে হইবে ওইদিন।
- মিশুকের ওইদিন অফিস আছে। অয় আইতে পারবে না।
- আর কেউ আছে এমন ? নইলে আমার ছবি আর তোলা হবে না।
- ব্যাপার না ... দ্যাখ, তামিম-সজিব নিয়া আসবে না ?

ছবি-মালাঃ (গাউন পাওয়ার দিনে)

সবার সমাবর্তনেই মনে হয় এই টাইপের একটা ছবি থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের খুব প্রিয় দুই বন্ধুর সাথে।
এই ছবি কখনোই হয়ত আমাদের গল্পগুলিকে প্রকাশ করতে পারবে না।

প্রিয় বলিগ (বন্ধু + কলিগ) সাদের সাথে।

আমিঃ শুভ, ওই তোর দাতেঁর মধ্যে ফাঁক দেখা যায়। :P

সাদ ছবি তুলবে আগে বলে নাই। বললে দাঁড়ি কেটে যাইতাম।


বিঃ দ্রঃ সকল ছবির জন্য বন্ধু সাদের প্রতি বরাবরের মত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।


শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪

আমাদের JUGBD

জাভা একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, বলা ভাল হাতির ন্যায় মস্ত বড় বিশাল একটা ল্যাঙ্গুয়েজ। বর্তমান সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে একটা বড়সড় জায়গা জুড়ে বসে আছে এই জাভা (Java) নামের ল্যাঙ্গুয়েজটি।

কথায় আছে মানুষের প্রয়োজনেই একেকটা প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটে, সেরকম একটা সময়ে মানুষ অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রগ্রামিং এর প্রয়োজনীয়তা বোধ করল, এবং জাভার সূচনা ঘটলো। এবং যেটা হল … জন্মের শুরু থেকেই জাভা দুনিয়াজুড়ে প্রগ্রামারদের মন জয় করে নিল। কিছুদিন পরে দেখা গেল কিছু প্রোগ্রামার মিলে ধোঁয়া উড়ানো কফির কাপ হাতে জাভা নিয়ে বকর বকর করতেছে। আস্তে আস্তে দেখা গেল, জাভা নিয়ে এরকম প্রোগ্রামারদের মধ্যকার আলোচনা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলো। ব্যাপারটাকে একটা প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য এই ধরনের আলোচনার একটা কেতাদুরস্ত নামও আবার দেওয়া হল, Java User Group (JUG). যেহেতু জাভার জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকলো, তো, প্রোগ্রামাররাও নিজেদের মধ্যে এইটা নিয়ে বেশি বেশি কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল। এরফলে যেটা হল, জাভার সাথে সাথে “জাভা ইউজার গ্রুপ” (JUG) ব্যাপারটাও দুনিয়াতে খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে গেল।

আমি যেই কথাগুলি বললাম উপরে, কিছুটা কল্পনা মিশ্রিত হলেও, আসলে কিন্তু এই টাইপের কিছুই ঘটেছিল। বিশ্বাস হচ্ছে না ? গুগলে সার্চ করে দেখে আসুন JUG এর উপর। খুব পাঠ্যপুস্তকের ভাষার মত করে “জাভা ইউজার গ্রুপ” সম্পর্কে বললে যেটা বলা যায়, এটা হল জাভা ইউজ করে এমন সব প্রোগ্রামারদের একটা কমিউনিটি যারা রেগুলার মিটিং অ্যা্রেঞ্জ করে, নিজেদের মধ্যে মেইল চালাচালি করে, অথবা অনলাইনে কোন গ্রুপ করে সক্রিয় থাকে। এই কমিউনিটির মধ্যে মানুষজন জাভার বিভিন্ন ফিচার নিয়ে আলোচনা করে, জাভা নিয়ে গল্প করে, কাজ করতে গিয়ে কে কি ধরনের সমস্যায় পরেছিল … তা নিয়ে বকবক করে, নিজেরা কিছু ওপেন সোর্স প্রজেক্ট খুলে সবাই মিলে কাজ করে … এইটাইপের আরকি !

মাসুম ভাই, জাভা মিট-আপ ২.০ এর অনুষ্ঠানে।

যেহেতু আমাদের দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিগুলিতে গনহারে জাভা ব্যাবহার করা হয়ে থাকে, সো, আমরাও আমাদের দেশে এরকম একটা সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। সেখান থেকেই Java User Group Bangladesh (JUGBD) নামের একটা সংঠনের উৎপত্তি ! প্রকৃতপক্ষে JUGBD র পুনর্জন্ম হয়েছে কথাটা বলা ভাল, কারন বেশ কয়েক বছর আগে থেকে এটার কিছু কার্যক্রম শুরু হলেও … মাঝের সময়টাতে এর সব ধরনের কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়। আমরা কিছু পিচ্চি-পুচ্চি টাইপের মানুষ বড়দের সমর্থন নিয়ে JUGBD র কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। মজার ব্যাপার হল, সংঠনটির বয়স মাত্র কয়েক মাস হলেও, এরই মধ্যে আমরা দুই দুইটি সফল আলোচনা সভার আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছি। এই দুই দুইটি সফল মিটিং আয়োজনের পিছনে যারা অকুন্ঠন অবদান ও সমর্থন রেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই এই লেখার মাধ্যমে।

প্রথম মিট-আপের পরে গ্রুপ ছবি, স্থানঃ ফ্রেপড হল।

আমাদের প্রথম মিটি-আপ ৫ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে পলাশীর মোড়ে “ফ্রেপড হলে” অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মুলত এই মিট-আপের উদ্দেশ্যে ছিল নিজেদের মধ্যের পরিচিতি বাড়ানো। পাশাপাশি JUGBD এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, একটা কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহন, কিভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো যায় … এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। Therap Services এর বজলুর রহমান রোকন সুচনা বক্তব্য দিয়ে এদিনের আলোচনা শুরু হয়। এরপর Therap Services এর তাহসিন ভাইয়া এবং Widespace থেকে আবদুল্লাহ ভাই জাভার বিভিন্ন টেকনোলজী নিয়ে আলোচনা করেন।

দ্বিতীয় মিট-আপের পরের গ্রুপ ছবি, স্থানঃ থেরাপ বিডি।

JUGBD এর দ্বিতীয় মিট-আপটি আয়োজন করা হয়েছে Therap Services এর পক্ষ থেকে ৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে। Therap একটি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যারা শুধুমাত্র জাভার টেকনোলজী নিয়ে কাজ করে। এরকম একটি প্রতিষ্ঠান যে “জাভা ইউজার কমিউনিটি” র জন্য কিছু একটা করবে, সেটা সহজেই অনুমেয়। দ্বিতীয় এই মিটিংটা ছিল আগের মিট-আপের থেকে অনেক বেশি গোছানো। এই অনুষ্ঠানে তিনজন বক্তা প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন। Vantage Labs থেকে মোজাম্মেল ভাই “Laravel” এর উপর, Therap Services থেকে মাসুম ভাইয়া “JVM Diagnostics” এর উপর এবং Widespace থেকে আবদুল্লাহ ভাই “Cassandra” এর উপর প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে সবাই মিলে ওপেন সোর্স প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করেন। আশা করে যাচ্ছে JUGBD গ্রুপ থেকে অল্পসময়ের মধ্যেই একটা ওপেন সোর্স প্রজেক্টের কাজ শুরু করা হবে।

JUGBD মিট-আপ ৩.০

JUGBD পরবর্তী মিট-আপের আয়োজন করার ঘোষনা দিয়েছে। এবারের মিট-আপ আয়োজনের দ্বায়িত্ব নিয়েছে Widespace। এখানে উল্লেখ্য Widespace ও কেবলমাত্র জাভা টেকনোলজী নিয়ে কাজ করে। ২২ মার্চ, ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে এই অনুষ্ঠানটি। যারা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আগ্রহী, তারা এই লিঙ্কে এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাবেন।

যারা জাভা নিয়ে কাজ করতে এবং আমাদের কমুনিটিতে জয়েন করতে আগ্রহী … তারা আমাদের ফেইসবুকের গ্রুপ JUGBD তে সদস্য হতে পারেন।

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০১৪

নিখোঁজ বিমানের জন্য

কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংগামী বিমানের হারিয়ে যাওয়াটা আমার বাস্তব জীবনে দেখা বড় মাপের ক্লাইমেক্সগুলির মধ্যে একটা হয়ে থাকবে। কেন নয় বলুন ? কিছু ইন্টারেষ্টিং পয়েন্ট এরকম হতে পারে,

১. ওই বিমানটিতে দুই জন ভুয়া পাসপোর্টধারী ব্যাক্তি ছিলেন, যেই পাসপোর্ট দুইটি বছরখানিক আগে হারিয়ে গিয়েছিল থাইল্যান্ড থেকে। এই ভুয়া পাসপোর্টধারী ব্যাক্তি আবার প্রায় একই সময়ে পাশাপাশি দুইটি সিটের টিকেট কেটেছিলেন।
২. বিমানটি যখন থেকে রাডার থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তখন বিমানটি মাটি থেকে প্রায় ৩৫হাজার মিটার উপরে ছিল ... কোন দুর্ঘটনায় পরলে সেটি কোন বিমানবন্দরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিল।
৩. বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার মুহুর্তে এটি তার যাত্রা পথ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল।
৪. ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে উড়োজাহাজকে পুরোপুরি রাডার থেকে গায়েব করে দেয়া যায়। আর হারিয়ে যাওয়া মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটিতে এই প্রযুক্তি নিয়ে সরাসরি কাজ করছেন এমন ২০ জন যাত্রী ছিলেন।

ঘটনার পিছনে যদি আসলেই কোন ঘটনা ঘটে থাকে, আমাদের মত সাধারন মানুষের সেটা হয়ত কখনোই জানা হবে না। হয়ত MI6 বা CIA এর মত বড় বড় এসপিওনাজ এজেন্সীর ঘাগু গোয়েন্দারা এটার সাথে জড়িত। বা কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সম্পৃক্ততা থাকতেই বারে। হয়ত যা ভাবছি তার কিছুই হয়নি ... কোন কারনে বিমানটি হয়ত ক্রাশ করেছে। এমন যায়গায় ধ্বংসাবশেষ পরেছে, যেটা হয়ত উদ্ধারকারী দল খুঁজে পাচ্ছে না। হয়তবা এই রহস্যের কোন কিনারাই হবে না কখনো। ১০/১২ বছর পরে এই ঘটনা নিয়ে হয়ত সুপার ক্রাইম-থ্রিলার টাইপের কোন মুভি বানাবে কেউ ... আমরা হয়ত কোন একটা ছুটির দিনের অলস বিকেলে সেটা দেখে শিহরিত হব।

কিন্তু এই অনেক "হয়ত"র মধ্যে আমি কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না। হারিয়ে যাওয়া এই বিমানের যাত্রীদের পরিবারগুলির কথা ভাবলেই মন খারাপ হচ্ছে। অনিশ্চয়তা একটা খারাপ অবস্থা। একটা মানুষ হারিয়ে যাওয়া আর মরে যাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ... হে বিমান, ফিরে এসো। 


রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৩

কুরবানীর ঈদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা !!

যখন ছোট ছিলাম, স্কুলে পড়তাম ... তখন ঈদ কিংবা কুরবানীগুলি ছিল আমাদের জন্য অনাবিল আনন্দের উৎস। সব মামাতো খালাতো ভাই বোনেরা মিলে হই চই, আত্মীয় স্বজনের বাসায় ঘুড়াঘুড়ি, টিভিতে ঈদের প্রোগ্রাম দেখা ... কত্ত মজা করে যে সেই দিনগুলি পার করতাম। দেখা যেত, কোন খালার কিংবা মামার বাসায় দাওয়াত ... আমরা সব কাজিনরা মিলে দল বেঁধে সেখানে যাচ্ছি, মুটামিটি মিছিলের আকারে ... আর সেই মিছিলের নেতৃত্বে সব সময়েই থাকত আমাদের বাদল মামা। কুরবানী উপলক্ষে অনেক মজার মজার অভিজ্ঞতা ছিল ছোট্ট বেলার। সেখান থেকে কয়েকটি বলছি।

কুরবানীর ঈদ নিয়ে একটা মজার কথা মনে পরে গেল। তখন অনেক ছোট আমি, পটুয়াখালীতে থাকি। আমাদের বাসার কাছের মোড়ের দোকানে কিছু কিনতে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যা হয় হয় ... এরকম অবস্থা। এক লোক হাট থেকে গরু কিনে ফিরছিল। তো রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে এক লোক গরুর দাম জিজ্ঞেস করতে গিয়ে উচ্চস্বরে বলে ফেলল, "ও ভাই গরু, দাম কত !" এই পর্যন্ত ঠিক ছিল, রাস্তার কাছের সবাইই বুঝতে পারছিল লোকটা ভুল করে বলে ফেলছে। এর মধ্যেই যেই ব্যাটা গরু নিয়ে ফিরছিল তার স্বপ্রতিভ উত্তর, "আরে ভাই ছাগল, পচিঁশ হাজার টাকা"।

আরেকটা মজার অভিজ্ঞতা হইছিল কুরবানীর হাটে গিয়ে। সেবার আমি, আব্বা আর আমাদের এলাকার একজন ভদ্রলোক গিয়েছিলাম কুরবানীর হাটে। ওই ভদ্রলোকের নাম মফিজুর রহমান। তিনি আমাদের পটুয়াখালী সরকারী কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন বিধায়, সবাই উনাকে সম্মান করে "মফিজ স্যার" বলে ডাকতো। তো হাটে গিয়ে সেই মফিজ স্যার প্রথমেই একটা ছাগল কিনে আমার দ্বায়িত্বে সেটা রেখে হাটের ভিতরে আব্বাকে নিয়ে গেল গরু কিনতে। আমি বেশ ছোট ছিলাম তখন, তাই আমাকে আর ভিতরে নিয়ে যায় নাই। তো ভাল কথা ... কিছুক্ষন পরে উনাদের গরু কেনা শেষ হলে, আব্বা আমার খোঁজে হাটের বাইরে এসে দেখে অনেক মানুষের ভিড়। এই ভিড়ের মধ্যে না ঢুকে সে গেল গরুর কাছে। ভাবছিল, গরু নিয়ে বাসায় ফেরার পথে আমাকে একসাথে নিয়ে নিবে। এখানে উল্লেক্ষ্য, গরু ছিল আবার ওই মফিজ স্যারের কাছে রাখা। এখন আব্বা ভিতরে গিয়ে মফিজ স্যার কেও খুঁজে পাচ্ছিল না। শেষে আব্বা হাটের মধ্যে যারা মাইকে ঘোষনা দিচ্ছিল, তাদের কাছে গিয়ে বলল, "ভাই একটা ঘোষনা দেন তো। বলেন, রকিব এবং মফিজ স্যার ... আপনারা মাইকের কাছে চলে আসেন" ... ভীড় আর কোলাহলের মধ্যে ওই মাইকের ব্যাট্যা কি শুনল কে জানে। সে ঘোষনা দিল, "রকিব স্যার আর মফিজ, আপনারা যেখানে থাকুন না ক্যানো ... এখনই মাইকের কাছে চলে আসুন !" এই ঘোষনা যখন মাইকে বাজতেছিল, ততক্ষনে মফিজ স্যার আমাকে খুঁজে পেয়েছিল। ঘোষনাটি শুনার পরে উনার যে চেহারা হয়েছিল না ... দেখার মত !

আরেকবার আমরা একটু আগেই কুরবানীর গরু কিনে ফেলেছিলাম। তখন বোধহয় আমি ক্লাস এইটে পড়ি। রোজ বিকেলে আমিই গরু নিয়ে মাঠে যেতাম, ঘাস খাওয়াতে। খুব কাউবয় কাউবয় মার্কা ভাব নিয়ে গরু আনা নেওয়া করতাম। একদিন সন্ধ্যার সময় বাসায় ফিরছিলাম গরু নিয়ে। পাশ থেকে দুইটা মেয়ে যাচ্ছিল রিক্সায় করে। একজন হুট করে বলে উঠল, "দেখ ! দেখ ! একটা সুন্দর রাখাল বালক !" ... আমরা "ইভ টিজিং" নিয়ে অনেক সামাজিক আন্দোলন করি, অথচ সেদিন বিকেলটাতে আমি নিজেই "অ্যাডাম টিজিং"এর শিকার হয়েছিলাম। কাউকে বলা হয়নি সে কথা। :P

এরবাইরে বলতে গেলে, ফিরোজ মামার কথা বলতে হয়। একেবারে পিচ্চিকালে কেউ যখন সালামী দিত না, তখন মামা আমাদের অফার করত, "আধা ঘন্টা কোন কথা না বলে থাকতে পারলে পঞ্চাশ টাকা" ! কি যে কষ্ট করে পঞ্চাশ টাকা সালামী পাইতে হইত ... উফফ !

ইন্টারমিডিয়েটে ঢাকায় পড়তে আসার পর থেকেই ঈদের দিনগুলির ম্যজিক কমতে থাকে ধীরে ধীরে। ঈদের পরপরই ঢাকায় ফেরার ব্যাস্ততা, অনেক কাজিনের ঈদের ছুটিতে পটুয়াখালীতে না যাওয়া এটার জন্য অনেকাংশে দায়ী। আর এখন চাকুরীর সুবাদে ঈদ হয়ে গেছে "বর্ধিত সপ্তাহান্ত" (এক্সটেন্ডেড উইকেন্ড) ! সব শেষে আম্মা আমেরীকাতে চলে যাওয়ার পরে, আমাদের আসলে ঈদ বলে কিছুই নেই ! আহারে, হারিয়ে ফেললাম স্বপ্নীল সেই ঈদের দিনগুলি ! :(