যেই বখাটে ছেলেকে সাকিব ধোলাই দিয়েছিল, ইভ টিজিং এর জন্য ... তার বাবা-মা নাকি সমাজের প্রতিষ্ঠিত মনুষ, আর সেই ছেলে নাকি লন্ডনে পড়াশুনা করে। সো, সেই ছেলের পক্ষে নাকি সাকিবের বৌকে টিজ করা সম্ভবই না। খালেদ মাহামুদ সুজন সাহেব নাকি এটা একাত্তর টিভিতে দাবি করেছে। ব্যাপারটা এরকম, কারো বাবা মা যদি সমাজে প্রতিষ্ঠিত এবং ক্ষমতাধর হয়ে থাকেন আর তাদের সন্তান যদি ইংল্যান্ড আমেরিকাতে পড়াশুনা করতে যায় ... সেই সন্তানের মত মাছুম সন্তান দুনিয়াতে আরেকটি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
পুরো সেট-আপটা একটু যদি আমরা একটু দেখার চেষ্টা করি এরকম পাব। সাকিব তার বৌকে ইভ টিজিং এর জন্য একটা বখাটে ছেলেকে পিটাইছে। সেই ছেলে কিন্তু সাথে সাথেই জামিনে ছাড়াও পাইছে। সাকিবকে এই ব্যাপারটার জন্য বোর্ড তলব করছে, তার কাছে ব্যাপারটা জানতে চাওয়া হইছে। এই ব্যাপারে বোর্ড থেকে কোন রেজাল্ট আমরা জানতে পারিনি। এর মধ্যে সাকিব আকরাম খানের থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে দেশের বাইরে গেছে লীগ খেলতে। বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, নতুন কোচের কাছে নাকি সাকিব বলছে তাকে বিদেশে খেলতে না দেওয়া হলে সে দেশের হয়ে আর খেলবে না। যেই কোচ এই দাবী করছে, আমি জানি না যে সে খেলোয়ারদের সাথে এখন পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক মিটিং করেছে কিনা। এরপর বোর্ড থেকে সাকিবকে দেশে তলব করা হয়। এবং আমরা দেখলাম সাকিব সাথে সাথেই দেশে ফেরত চলে আসে। কিছু পত্রিকায় অবশ্য দাবী করা হয়, ঘটনা এত ঘোলা হয়েছে বলে সাকিব নাকি চলে আসছে। এবং দেশে ফেরত আসার পরে বেশ দ্রুততার সাথেই সাকিবকে ছয় মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ব্যান করা হয়।
ঘটনা গুলিকে আমি যেভাবে দেখছি, সাকিবকে একটা ভয়ংকর ফাঁদে ফেলা হয়েছে। প্রথম কথা, সাকিব যদি কোচের কাছে দাবী করেই থাকে যে বিদেশে খেলতে না দিলে সে বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে অবসর নিবে তাহলে সে ভুল করেছে। এজন্য সে শাস্তি পেতেই পারে। কিন্তু ব্যাপারটা কি প্রমানিত হয়েছে এখন পর্যন্ত ? আর নতুন আসা একজন কোচ একটা দাবী করলেই কি আমরা সাথে সাথে সেই দাবী মেনে নিব ? এখানে মিস কমিউনিকেশনের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। প্রথমত কোচ একেবারেই নতুন, সো, তার নাম ব্যাবহার করে বোর্ড একটা প্লাটফর্ম তৈরি করার চেষ্টা করছে না তো ? কারন, কোচ যদি এরকম মেইল বোর্ডের কাছে করেই থাকে, তাহলে সেটার একটা তদন্ত হতে হবে। সেখানে সাকিব উপস্থিত থাকবে, কোচ থাকবে। কিন্তু যেই কোচের দাবীর উপর ভিত্তি করে সাকিবকে দোষী প্রমানিত করা হল, সেই কোচকে কি আমরা কেউ দেখেছি ? দেখিনি। সেই কোচের সাথে কথা না বলে কিভাবে বোর্ড এই সীদ্ধান্তে গেল, যে সাকিব অন্যায় করেছে ? এর আগেও বাংলাদেশের অনেক কোচই চলে যাওয়ার সময় বোর্ডের বিরুদ্ধে অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে গিয়েছিল। সেই সব অভিযোগের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছিল ? তখন কোথায় গিয়েছিল আইন কানুনের এইসব দাবী ?
সাকিবকে কোন অপরাধের জন্য এই শাস্তি দেওয়া হল ? ভারতের টুর্নামেন্ট চলার সময়ের ওই ইভ টিজিং এর ঘটনার জন্য? নাকি দেশ থেকে NOC না নিয়ে বিদেশে খেলতে গিয়েছে, সে জন্য ? নাকি সাকিব দেশের হয়ে আর খেলবে না এরকম হুমকী দিয়েছে সে জন্য ? আমি কোথাও কিন্তু স্পেসিফিক কোন কথা পেলাম না, যে এই কারনেই সাকিবকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বোর্ড প্রেসিডেন্টের প্রেস কনফারেন্স অনেকটা এরকম, "ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ ... সাকিব অ্যা্রোগেন্ট ... ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ ... সাকিব আমাদেরকে তোয়াজ করে না, আমাদের কোন কথা শুনে না, আমাদেরকে তেল দেয় না ... ভ্যাঁ চ্যাঁ চ্যাঁ ... সাকিব টেকা কামায় অনেক, আর কামাতে দিব না ... ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ ... সে আগে থেকেই অনেক অন্যায় করছে ... হুঁ হুঁ হুঁ ..."। এই যায়গাটা পরিষ্কার করা উচিত আগে, কেন সাকিব এই শাস্তি পেল। সব থেকে বড় কথা, কোন যায়গাতে কোন অপরাধের জন্য কোন খেলোয়ারকে শাস্তি দেওয়া হলে, সাথে সাথেই জানিয়ে দেওয়া হয়, সেই খেলোয়ারটি কত দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। এরকম কি কিছু বোর্ড প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্বেলনে ছিল? আমার জানা নাই। তবে কি এটা অনেকটা কোর্ট মার্শালের মত হয়ে গেল না ? নাকি কোর্ট মার্শালেও শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করা যায় ? আর সাকিব অ্যা্রোগেন্ট কোন দিক থেকে ? সে বোর্ডের কর্তা ব্যাক্তিদেরকে তেল মেরে চলে না, সেই জন্যে? আর সাকিব যদি সত্যি সত্যি অ্যা্রোগেন্টই হয়ে থাকে, আমি তো বলবো, আমাদের দেশে এরকম সাকিবের মত "অ্যা্রোগেন্ট পারফরমার" দরকার আছে।
এরপর আসি বোর্ডের নিয়ম না মেনে NOC না নিয়ে দেশের বাইরে খেলতে যাওয়া প্রসঙ্গে। সাকিব দেশে ফিরে টিভি ক্যামেরার সামনে দাবী করেছে যে আকরাম খান নাকি তাকে মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই সে বিদেশে খেলতে চলে গিয়েছে। ব্যাপারটা যদি অন্যায়ই হয়ে থাকে, তাহলে তো আকরাম খানও অন্যায় করেছে। কারন মৌখিক অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা তো তার নেই। তাহলে আকরাম খানেরও কি বিচার হওয়া উচিত না ?
এবার আসি শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে। কোন একটা ঘটনা ঘটলে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। সেই তদন্ত কমিটির সুপারিশক্রমে শাস্তির একটা প্রসঙ্গ আসে। এখানে সেরকম কোন প্রসিডিউর ফলো করা হয়েছে কি ? সাকিব দেশে আসলো, পরের দিন তাকে শাস্তি দিয়ে দেওয়া হল। এখানে আমরা একটা ব্যাপারই আইডিন্টিফাই করতে পারি, বোর্ড প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমাহীন, এবং সে চাইলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। এটা কিন্তু আল্টিমেটলি আমাদের দেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর।
এবার আবার ওই ইভ টিজিং এর প্রসঙ্গে আসি। এটা কিরকম কথা হতে পারে যে একজন ব্যাক্তির বাবা মা সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষ হলেই আর সেই ব্যাক্তি যদি বিদেশে পড়াশুনা করে, তাহলে সে কখনোই ইভ টিজিং করতে পারবে না ? তবে কি সমাজে প্রতিষ্ঠিত ওই বখাটে ছেলের পরিবারের অদৃশ্য চাপ আছে সাকিবের বর্তমান ছয় মাসের সাসপেনশনের পিছনে ?
ছয় মাসের সাসপেনশন, এটা কোন মাত্রার অপরাধের জন্য আসতে পারে ? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর সাথে যোগ করেছে, এখন থেকে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়ার কোন পন্যের বিজ্ঞাপনের মডেল হতে হলে তাকে বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে। এরকম কোন আইন বিশ্বে আর কোন দেশের কোন ধরনের খেলাধুলায় আছে কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আধুনিক যুগে যে দাস প্রথা চালু করতে যাচ্ছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সাকিবের প্রতি বোর্ড এখন পর্যন্ত যেই সীদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা একেবারেই আত্মঘাতী। সাকিবের বর্তমান শাস্তির মেয়াদ শেষ হতে হতে ২০১৫ এর বিশ্বকাপ চলে আসবে। এরকম একটা সময়ে এসে এধরনের সীদ্ধান্ত যখন দেশের সেরা খেলোয়াদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়, সেটা কতটা যৌক্তিক আর কতটা নিজের ব্যাক্তিগত আক্রশের বহিঃপ্রকাশ ... অনুমান করে নেওয়াটা খুবই সহজ।
গেল দুই দিনে ফেসবুকে এই ব্যাপারটাতে প্রচুর পরিমান পোষ্ট এসেছে। অনেকেই মনে করে সাকিবের উচিত দেশের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেওয়া। মজার ব্যাপার হল, এরকমটা যদি সাকিব আজকে আসলেই করে থাকেন (দেশের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন) তাহলে কিন্তু বোর্ডের ওই তথাকথিত যদু মধুদেরই জয় হবে। তখন তারা বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে, "আমরা আগেই বলছিলাম, ও দেশের হয়ে খেলতে চায় না !" বরং আমাদের উচিত এই সীদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। যে যার অবস্থান থেকে যদি আমরা প্রতিবাদ করতে পারি এই বোর্ডের এই অন্যায় আচরনের, আমি বিশ্বাস করি সাকিবকে আমরা খেলায় ফিরিয়ে আনতে পারবো।
#BringBackShakib
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন