অনার্স লাইফের ফাইনাল পরীক্ষার দিনগুলির কথা মনে পরলো আজকে। কত কত স্মৃতি রেখে আসলাম সেই কার্জন হলটাতে। ইংরেজরা কি পাপ করেছিল জানি না, কিন্তু তাদের পাপের বোঝা যে আমাদেরকে এভাবে বয়ে বেড়াতে হবে জানা ছিল না ... মানে ওরাই (ইংরেজরা) কার্জনহলটা বানিয়েছিল কিনা ! কার্জন হল তৈরি না হলে, আমাদের পরীক্ষাও দিতে হত না ... তাই না ?
ফার্ষ্ট ইয়ারে একটু নার্ড (বাংলায় আতেঁল শব্দটা শুনতে ক্যামন ক্যামন জানি লাগে) টাইপের ছিলাম। মনে আছে ফার্ষ্ট ইয়ারের প্রথম পরীক্ষাটা দিয়ে মন এতই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবারটাও খাই নাই, যদিও সেটাতে ৩.৭৫ পেয়ে গেছিলাম কিভাবে কিভাবে যেনো। সেই পরীক্ষায় একটা প্রশ্ন এসেছিল এরকম, "একটি প্রিন্টারের কার্যপ্রনালী বর্ননা কর" ... কইত্তে কি দিছে, কমন পড়ে নাই। প্রিন্টারের কার্য-প্রনালীর কোন টেকনিকাল টার্মও জানতাম না। কি জানি হাভিজাভি জিনিস লিখে একটা ছবি এঁকেছিলাম অনেকটা এরকম, তিনটা বক্স আর তা ক্যাপশন ১) প্রিন্টারে কাগজ যাচ্ছে প্রিন্ট হওয়ার জন্য, ২) কাগজ প্রিন্টারের ভিতরে, প্রিন্ট হচ্ছে, ৩) প্রিন্ট শেষে কাগজ বের হয়ে চলে আসছে। :P
সেই শুরু চাপা-বাজীর। সব কি আর মনে থাকে, নাকি পড়ে পারা যায় ? থার্ড ইয়ারের পরীক্ষাতে একটু কম করছিলাম চাপাবাজী, ফলাফল বিপর্যয়ের মাধ্যমে আমাকে সেটার প্রায়াশ্চিত্ত করতে হয়েছিল। অনার্সের পরীক্ষার কথা বললেই আরেকটা ব্যাপার মনে আসে। এইটা কাকে বলে / ওইটা ডিফাইন করো ... এই টাইপের প্রশ্ন ভার্সিটি লাইফে অনেক আসে। আমার একটা স্টার্টিং ছিল এই টাইপের প্রশ্নের জন্য, "ইট ইজ ভেরি হার্ড টু ডিফাইন 'ওইটা' ইন এ্যা ফিউ ওয়ার্ডস" :P
ফার্ষ্ট ইয়ারের কথা যখন উঠলোই, শুভর একটা কথা বলতেই হয় এখানে। আমাদের ডিজিটাল সিস্টেমসে একটা প্রশ্ন আসছে অনেকটা এরকম, তিন তলা একটা বিল্ডিং এর বিভিন্ন ফ্লোরের মধ্যে বিট প্যার্টার্ন রিলেশন বলে বলছে কিছু একটা করতে হবে। মানে, তিনটা ফ্লোরের প্রতিটাকে একটা করে বিট দিয়ে রিপ্রেজেন্ট করলে যেই আটটা প্যাটার্ন পাওয়া যায় সেটা আরকি। খুবই সহজ প্রশ্ন ছিল সেটা, যদিও শুভ ভুল করছিল। কারন, শুভ গ্রাউন্ড ফ্লোর ধরে কাজ করছিল ... ফলে তিনতলার বিল্ডিং চারতলা হয়ে গিয়েছিল। :P
এই পরীক্ষা নিয়ে মজার কথা বলে শেষ করতে পারবো না আসলে। মনে আছে আরাফাত স্যার প্রথম যেদিন হলে গার্ড দিতে এসেছিল, পিছনের জনের সাথে কথা বলার সময় ঘুরতে গিয়ে স্যারের পেটে কনুইয়ের গুঁতা মেরে দিয়েছিলাম। আমাদের আরেকজন শ্রদ্ধেয় স্যারের নাম আমরা দিয়েছিলাম, "পরীক্ষার হলের ম্যারাডোনা", কারন, কথা বললেই স্যার পোলাপাইনকে খালি এইজায়গা থেকে ওই যায়গায় পাঠাত। এখানে আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করি। জাভা পরীক্ষার দিন উত্তর পত্রে কিছু লিখবার আগেই সেই স্যার আমাকে উঠিয়ে দিছিলেন (জীবনে এই একবারই আমাকে পরীক্ষার হলে তোলা হয়েছিল) ... কারন আমি প্রশ্ন পেয়েই সামনের জনকে বলেছিলাম, "আরে, প্রশ্ন দেখি বেশি সোজা হইছে !" :P
ফোর্থ ইয়ারের একটা পরীক্ষার কথা স্মরণ করি। পরীক্ষার হলে প্রশ্ন পাওয়ার পর-পরই কথার একটা মৃদু হাওয়া বয়ে যায় সাধারনত। কে কোনটা দিয়ে শুরু করবে, কার কত সেট কমন পরছে ... এরকম আলোচনা হয়ে থাকে এই সময়টাতে। ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেমস পরীক্ষার দিন প্রশ্ন পাওয়ার ২০ মিনিট পরেও দেখি হলের মধ্যে কোন সারা শব্দ নেই। সবাই দেখি মাথা নিচু করে প্রশ্ন পড়ছে। কথা বলবে কি, কেউ তো ঠিকই করতে পারছিল না কোনটা থেকে অ্যান্সার করা শুরু করবে। :P
পরীক্ষার হলে বিনোদনের প্রয়োজনের হলেই আমি সাধারনত যেটা করি, ক্লাশের কোন একটি মেয়ের দিকে তাকাই ... বিশেষ করে প্রিয়াঙ্কা অথবা পিঙ্কির দিকে। পরীক্ষার হলে এদের দেখলে নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হয়, একই সাথে হাসিও পায়। এভাবে কোন মানুষ লিখতে পারে নাকি ? আরেকটা বিনোদন হইল, পিঙ্কি একবার লুজ বইলা চিল্লালেই একটা করে ফিচকা শয়তানী মার্কা হাসি দেওয়া।
অনেক মজার ঘটনা যেমন আছে, তেমনি অনেক মন খারাপের স্মৃতিও আছে এই পরীক্ষা নিয়ে। আজকের দিনে না হয় আমি শুধু সুখী সুখী কথাগুলোই মনে আনলাম, দুঃখগুলি জমায়ে রাখলাম আরেক দিনের জন্যি ! :)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন