শনিবার, ১১ মে, ২০১৩

বাংলা-বিহার-উরিষ্যার সর্বশেষ নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের আসল কাহিনী


আমাদের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল বাংলা-বিহার-উরিষ্যার সর্বশেষ সম্রাট সিরাজুদ্দৌলা যখন ২৩শে জুন, ১৭৫৭ সনে ইংরেজদের কাছে মর্মান্তিকভাবে পরাজিত হয়েছিল পলাশীর অম্রকাননে ... ঠিক সেদিন। মীর জাফর নামটি আমাদের কাছে একটি নাম এর চেয়ে অনেক বেশী তাৎপর্যপূর্ন হয়ে গিয়েছিল এই যুদ্ধের বিশ্বাস ঘাতকতার মাধ্যমেই। যাই হোক, এরকম বই পুস্তকের ইতিহাস অনেকেই কম বেশি জানেন। কিন্তু ঢাকা শহরের বংশাল রোড এলাকাতে এক ক্যানভাসারের কাছ থেকে জানা গেল সম্পূর্ন ভিন্ন আরেকটি গল্প! কি হয়েছিল ওইদিন পলাশীর অম্রকাননে? কেন পরাজিত হয়েছিল আমাদের নবাব সিরাজুদ্দৌলা? আর কোন ভনিতা না করে সরাসরি চলে যাই মূল প্রসঙ্গে।

মীর জাফর ছিল আমাদের নবাবের একজন সেনাপতি। যুদ্ধের ময়দানে ঘসেটী বেগমের চালে মীর জাফর বেইমানী করে আমাদের নবাবের সাথে। তারপরও নবাব বিচলিত হননি। কারন উনার ছিল তুখড় বুদ্ধি আর যুদ্ধের ময়দানের ব্যাপারে অগাধ জ্ঞান! উনি একটা কাজ করলেন ... যেসকল সৈনিক তখনো উনার অনুগত ছিল তিনি তাদের সকলের মাথার চুল ফেলে দিতে নির্দেশ দিলেন। মানে মাথা ন্যাঁড়া করার নির্দেশ দিলেন। এরপর ন্যাঁড়া হওয়া প্রতিটা সৈনিকের মাথায় আলকাতরা মাখালেন। এরপর সবাইকে সারিবদ্ধ ভাবে বসে পরার নির্দেশনা দিলেন। ইংরেজরা অনেক বুদ্ধিমান জাতি হলেও তাদের তাৎক্ষনিক বুদ্ধি ছিল কম। তারা অনেক দূর থেকে ন্যাঁড়া মাথায় আলকাতরা মাখানো সৈনিকদের কে কামান মনে করলো এবং চিন্তায় পরে গেল। এতগুলা কামানকে মুকাবেলা করা তো মুখের কথা নয়। তারা পিছু হঁটার সীদ্ধান্ত নিল।

ইতিহাসের নানা বই পত্রে উল্লেক্ষ আছে, ওই সময়ে বাংলায় চর্মরোগ বেশ মারাত্মক ভাবে বিস্তার লাভ করেছিল। আমাদের নবাবের কিছু সৈনিক যারা কামান এর ভূমিকাতে অভিনয় করছিল ... তাদের মধ্যেও কারো কারো চর্মরোগ ছিল বলে জানা যায়। সমস্যা যেটা হয়েছে, ওই কামানের ভূমিকায় অভিনয়ের সময় কিছু সৈকিকের চুলকানী উঠে গেল। ফলে চুলকানীর সুবিধার্থে তারা নড়াচড়া শুরু করল। ইংরেজরা ব্যাপারটা দেখে ফেলল এবং বুঝে ফেলল যে ওগুলো আসলে কামান নয় ... মানব কামান টাইপের কিছু মাত্র। ফলে তারা পুনুরায় আক্রমন করে আমাদের প্রানপ্রিয় নবাব কে পরাজিত করল।

সংক্ষেপে এই হল আমাদের নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের আসল ঘটনা। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে এই ঘটনা(সৈনিকদের মধ্যে চুলকানী রোগ এবং সেটা থেকে সৃষ্ট পরাজয়) কি কোন ভাবে এড়ানো যেত না? অনেক ইতিহাসবিদ অনেক ভাবে এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে শোনা যায়। তবে আমি আমার লেখার শুরুতে যেই ক্যানভাসারের কথা বলেছিলাম মানে যার থেকে এই যুগান্তকারী ইতিহাস জানতে পারলাম ... তার ভাষ্য মতে সবই হয়েছিল একটি মাত্র মলমের অভাবে! আর মলমটির নাম "পাগলা মলম"! এই পাগলা মলম ব্যাবহারে শরীরের সকল চুলকানী/******/*******/*****(সবগুলি আর লিখতে পারলাম না, বুঝে নিতে হবে কিছু ব্যাপার খিয়াল কইরা! ) সব নাকি নিমিষে সাফ হয়ে যায়। সুতরাং যেটা দাড়ালো, সিরাজুদ্দৌলার সময়ে যদি "পাগলা মলম" থাকতো তাহলে আমাদেরকে পলাশীর অম্রকাননে পরাজয় মেনে নিতে হত না। আমাদের স্বাধীনতার সূর্যটিও ডুবত না। ভাবা যায়? এখান থেকে আমাদের শিক্ষনীয় ব্যাপার যেটা সামনে চলে আসে, "সঠিক সময়ে সঠিক মলম লাগান! নইলে ভুগতে হবে!"

বিঃদ্রঃ এই গল্পটি একজন ক্যানভাসারের থেকে শোনা মাত্র। এখানে লেখকের কোন ভূমিকার লেশমাত্র নেই!

রবিবার, ৫ মে, ২০১৩

হাউজ নাম্বার ১০ এর ১ – বি, আরামবাগ(পর্ব - ১)


আমি যেই বাসায় থাকি, সেই বাসার গল্প লিখবো ভাবছিলাম অনেক দিন ধরে। লেখা আর হচ্ছিল না। কয়েকদিন আগে আমার এক হাউজমেট বাদল ভাই অন্যত্র চলে গেলেন। তখনই মূলত মাথায় আসে এই গল্পটি। আমি ঢাকার এসেছি সেই ২০০৫ সালে। তখন থেকে এই ২০১৩ পর্যন্ত এই একই বাসায় আছি। এর মধ্যে কত কত মানুষ আসল(হাউজমেট), আবার চলেও গেল। সেই সব মানুষদের সাথের স্মৃতিকথার গল্পই এটি। সব গল্পের শুরু থাকে একটা, যেখান থেকে শুরু হয় একটি পথচলার। তেমনি শুরু থেকেই শুরু হোক তবে …


কোন এক রৌদ্রজ্জল সকালে আমি আর আমার বন্ধু সালাউদ্দিন শুভ নিজ নিজ বাবার সহিত ঢাকা এসেছিলাম। উদ্দেশ্য উচ্চ মাধ্যমিকে ঢাকার কোন কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করা।আর এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য বিধেয় ছিল একটা ঠিকানা - ১০/১/বি আরামবাগ, মতিঝিল। সে দিনটি ছিল ৫ মে, ২০০৫। এখানে আমাদের স্কুলের একবছরের এক সিনিয়র ভাইয়া থাকতেন যিনি তখন নটরডেম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়তেন। উনার নাম সাইমুম কাওসার। অনেক খুঁজে টুজে বাসা বের করলাম। এখানে তখন ৫ জন মেস করে থাকতেন, যার মধ্যে চার জন পড়তেন নটরডেম কলেজে আর একজন ছিলেন চাকুরীজীবি। সাইমুম ভাই ছাড়া আর ছিলেন নয়ন ভাই, আদনান ভাই, সোহেল ভাই আর ওই চাকুরীজীবি ভাইয়া(নাম মনে নাই)। তখন উনাদের থেকে মন্ত্রমুদ্ধের মত শুনলাম নটরডেম কলেজের গল্প আর মনে মনে চিন্তা করছিলাম, পড়তে হলে এই কলেজেই পড়বো! আসলে আমাদের তখন মাত্র মেট্রিক পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। আমাদের ঢাকায় আসার একমাত্র কারন ছিল শুধু খোঁজ খবর নেওয়া যেমন কিভাবে ভর্তি হতে হবে, কি কি রিকোয়ারমেন্ট আছে কোন কোন কলেজের, কোন কোন কলেজ ভাল হবে … এসব আরকি।

রেজাল্টের পর আমার মাথায় হাত, গোল্ডেন এ+ পাই নাই। ঢাকায় যেরকম কম্পিটিশন শুনছিলাম, তাতে কোনই চান্স দেখছিলাম না ভাল কোন কলেজে ভর্তি হওয়ার। এর মধ্যে সরকার আবার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিস্টেম বন্ধ করে দিয়েছে। এর যায়গায় রেজাল্টের বেসিস এ মৌখিক পরীক্ষার অনুমতি ছিল। আবার ঢাকায় আসলাম রেজাল্টের পর। মাদারটেকে মামার বাসায় উঠলাম। নটরডেম কলেজ, ঢাকা কলেজ, রাইফেলস কলেজের ভর্তি ফরম কিনলাম। ঢাকায় ভর্তির চাপ অনুভব করে বরিশালের অমৃত লাল দে কলেজেরও ফরম কিনলাম। এর মধ্যে নটরডেম কলেজে মৌখিক পরীক্ষা দিলাম। মুটামুটি ১০টার মত প্রশ্ন করেছিল পরীক্ষায় … আমি মনে হয় ৭/৮ টার অ্যান্সার দিতে পেরেছিলাম। একটু টেনশনে ছিলাম আমি তখন, মনে হয় চান্সটা হাত ফসকে গেল। টেনশনে টেনশনে কাটছিল সেই সব দিনগুলি। এক সকালে নয়া দিগন্ত পেপারে বের হল রেজাল্ট এবং সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমি নটরডেম কলেজে চান্স পেলাম। আমার মনে আছে আমাদের ক্লাশ শুরু হয়েছিল ২১শে আগষ্ট, ২০০৫ সালে। তখনও আমি মামার বাসা থেকে কলেজ করতাম। এরমধ্যেই খবর পেলাম সাইমুম ভাইয়াদের বাসার ওই চাকুরীজীবি ভাইয়া চলে গেছেন। একজনের জন্য জায়গা খালি আছে, আমি চাইলে উঠতে পারি। তখন ঢাকাতে আমার বাইরে বের হতে ইচ্ছাই করতো না। কেমন যেনো, বাইরে বের হলেই খুব ক্লান্ত লাগত। অনেক চিন্তা ভাবনার পরে স্বীদ্ধান্ত নিলাম, ওই বাসাতেই উঠে যাই … কি আছে জীবনে। শুরু হল আমার মেস জীবন এবং আমার ঠিকানা হল ১০ এর ১ – বি, আরামবাগ। দিনটি ছিল ১ সেপ্টেম্বর, ২০০৫।