আমাদের দেশটাই এমন হয়ে যাচ্ছে, যেটা হবার কথা না সেটা বাধাহীন ভাবে হয়ে যাচ্ছে ... আর যেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক, সেটা পাওয়ার জন্য অন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়। কখনো সেই আন্দোলনে সফলতা আসে, কখনো না। দুঃখের বিষয় হল, আন্দোলনে সফলতা আসা কিংবা না আসা ... এটা নিয়ে আমরা সবাই আবার চি্ন্তিত নই। যার যেটা নিয়ে চিন্তা করলে লাভ আছে, সে সেটা নিয়েই চিন্তা করি।
ধরা যাক শিক্ষা-ক্ষেত্রে VAT এর ব্যাপারটা। যাদের ঘাড়ে এই VAT এর বোঝা পরলো, তারাই চিন্তিত হল বেশি। তাদেরই কিছু বন্ধুবান্ধব যারা সরকারী সুবিধায় পড়ালেখা করছে, অত্যাধিক সুবিধাপ্রাপ্তির লজ্জায়ই কিনা তারাও একটু মিনমিনে কন্ঠে সমর্থন দিল। কিন্তু ব্যাপারটা যেরকম সবার মাথাব্যাথার কারন হবার কথা ছিল, সেরকমটা কিন্তু দেখা গেল না।
এরপর ধরেন SSC/HSC পরীক্ষার মত পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র গনহারে ফাঁস হবার ব্যাপারটা। আমরা কি সহজ ভাবেই না ব্যাপারটা মেনে নিলাম। তাই না? এই ইস্যুতে খুব একটা আন্দোলন পর্যন্ত হল না। এটাতে তো খালি চোখে ক্ষতিগ্রস্থ হবার কেউ নেই। কেউ নিশ্চয়ই দাবী করতে পারে না যে সে প্রশ্ন পরীক্ষার আগে পায়নি বলে পরীক্ষায় খারাপ করেছে। কিন্তু এতে আমাদের সমাজের কতটা গভীরে ঘুন ধরে গেছে, এটা একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেল। সমাজ ব্যাবস্থার মৌলিক একক যদি পরিবারকে বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে আমার প্রশ্নঃ একটা ছেলে বা একটা মেয়ে যখন পরীক্ষার আগে প্রশ্ন সংগ্রহ করল ... তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাপারটা কিভাবে গ্রহন করতে পারল? আমাদের সমাজটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে আসলে।
এত কথা যেই কারনে বলা লাগলো। আজকে দেখলাম ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে যেই আন্দোলন হচ্ছিল ... সেখানে পুলিশ নির্দয়ভাবে লাঠিপেটা করল। প্রশ্নপত্র যে ফাঁস হয়েছে সেটা সরকার পরীক্ষার দিনই প্রশ্ন ফাঁসকারীদের আটকের মাধ্যমে প্রমান করেছে। এখানে এই পরীক্ষা বাতিলের দাবীতে আন্দলনের তো কোন দরকারই ছিল না, সরকারেরই তো উচিত ছিল নিজে থেকে এটা বাতিল করা। কিন্তু ওই যে শুরুতেই বললাম, "আমাদের দেশটাই এমন হয়ে যাচ্ছে, যেটা হবার কথা না সেটা বাধাহীন ভাবে হয়ে যাচ্ছে ... আর যেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক, সেটা হওয়ানোর জন্য অন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়।"
আমাদের দেশটা কিন্তু এরকম ছিল না। যেকোন পাবলিক পরীক্ষায় আগেও হয়ত প্রশ্ন ফাঁস হত, কিন্তু সেটা ছিল চোখের আড়ালে। চোরের মত করে একটা শ্রেনী এই কাজটা করত। আর এখন? SSC/HSC র প্রশ্ন ফেইসবুকের গ্রুপে পাওয়া যায়। প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে পাওয়াটাই এখন স্মার্টনেস। প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে পেয়ে এখন কিন্তু আর কেউ চোরের মত মুখ লুকায় না, বরং বুক ফুলায়ে গর্ব করে বলে, "প্রশ্ন যেইরকম কঠিন ছিল, তাতে প্রশ্ন ফাঁসের কোন বিকল্প নেই"।
অনেক আগে খুব কষ্ট নিয়ে একটা কথা বলেছিলাম, এইদেশে অনার্স পাশকরা একটা ছেলে/মেয়ে কেন দেশে পরে আছে সেই কৈফিয়ত তাকে দিতে হয়। আমার মনে হয় আমি ভুল বলেছিলাম। আমাদের দেশটা বিদেশীদের নয়, ওরা কখনোই এসে এই দেশটাকে ঠিক করে দিয়ে যাবে না।