রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৪

৪৮ তম সমাবর্তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (২য় পর্ব)

সকাল ১১.৩০
- দোস্ত তুই কোথায় ? সমাবর্তনে আসবি কখন ?
- আমি একটু দোকানে যাই। চলে আসবো ২টার আগেই।
দুপুর ১.৩০
- দোস্ত তুই কোথায় ?
- আমি বাসার নিচে নামছি একটু। রেডি হয়ে আসতে যতক্ষন লাগে।
- তুমি যেহেতু মেয়ে মানুষ না ... আশা করি বেশি সময় লাগবে না রেডি হইতে।
দুপুর ৩.০০
- দোস্ত তুই কোথায় ?
- এইতো, বাসা থেকে বের হচ্ছি
বিকাল ৪.০০
- দোস্ত, তুই আসবি না ?
- আমি তো চলে আসছি ... এই আর তিন চার মিনিট লাগবে।


- আচ্ছা, কাল এসে কি করবো ? আজকেই তো ছবি টবি তুলে ফেললাম !
- তাই তো। কাল এসে কি করবো ?

- আমরা আজকে কোথায় খাইতে যাব ?
- চল গুলশান যাই !
- প্রত্যেকদিন অফিস করতে ওইখানে যাস ... তাই বলে আজকেও ?
- না না ... গুলশান অনেক দূর হইয়া যাবে !
- চল বার্ড'স আই ভিউতে যাই।
- ওইখানের খাওয়া ভাল না !
- চল ফ্ল্যম্বিতে যাই ... বুফেই খাই !
- ফ্ল্যম্বি তো আর গুলশানে না ... তাই না ?
- দোস্ত, এখন গুলশানে যাবি ? ম্যালা জ্যাম !
- চল বেইলী রোডে যাই।
- চল এখানে যাই ...
- চল সেখানে যাই ...
- চল হারিয়ে যাই ...
...
...
...
...
১৫/২০ মিনিট এভাবে তাহাদের আলোচনা চললো। এরপর ...
- চল গুলশান যাই !
- চল বার্ড'স আই ভিউতে যাই।
- চল ফ্ল্যম্বিতে যাই ... বুফেই খাই !
- চল এখানে যাই ...
- চল সেখানে যাই ...
- চল হারিয়ে যাই ...
...
...
...
শেষ পর্যন্ত ৩০/৪০ মিনিটের আলোচনা শেষে আমরা বার্ড'স আই ভিউ রেষ্টুরেন্টে গেলাম।

- দোস্ত তোর ব্যাগটা সুন্দর হইছে। কোরিয়া থেইক্কা আনছিস ?
- হু।
- তয় দোস্ত ব্যাগটা মেয়েদের মনে হচ্ছে ! :P
- (তাহার গার্ল ফ্রেইন্ড) দেখছো, ও বলছে ব্যাগটা মেয়েদের! আমাকে দিয়া দেও !

- এই, আজকে আমাকে কেমন লাগছে ?
- খুব সুন্দর। এরকম ফরমাল থাকলেই তো পার।
- ধুর। প্রত্যেক দিন কি এরকম থাকা যায় নাকি ? আচ্ছা, সত্যি করে বল তো, কেমন ভাল লাগছে ?
- ইসসস ... খালি ভাল লাগছে শুনতে মনে চায়, না ? :P

- ওই জানিস, আজকে অমুকে না তার হবু শ্বাশুড়ির মাথায় সমাবর্তনের টুপির ফিতা ঠিক কইরা দিছে !
- কস কি ! সত্যি নাকি ?
- হ ... ছবি আছে ! দ্যাখ দ্যাখ !

- দোস্ত তোর ফার্ষ্ট ইয়ারের স্ট্যাটিসটিক্স পরীক্ষার কথা মনে আছে ?
- কোন কথাটা যেনো দোস্ত ?
- ওই যে ... তুই পরীক্ষা দিয়া বের হইয়াই চিল্লায় বলতেছিলি, "আজকে দিছি সব বানায়ে লেইখ্যা !" তখন তোর পাশ দিয়া একজন ম্যাডাম যাচ্ছিলেন। সে তোর কথা শুনে বলতেছিলেন, "বানায়ে লিখলে লাভ হবে না !"
(এখানে একটা কথা বলে রাখি, আমাদের স্ট্যাট স্যার যেই নোট সরবারোহ করেছিলেন সেটার প্রথম প্রশ্নটা ছিল "What is statistics ?" আর সেটার উত্তরের প্রথম লাইন ছিল অনেকটা এরকম যে, "It is very hart to define statistics in a few words"। এরপর থেকে কোন পরীক্ষায় কোন আনকমন ডেফিনেশন মার্কা প্রশ্ন আসলেই আমি লিখা শুরু করতাম, "It is very hart to define অমুক in a few words")

- ওই, তুই ড্রেস রিহার্সালে যাস নাই ক্যান ?
- ধুর! গরমের মধ্যে ভিতরে যাইতে ইচ্ছা করে না !
- তুই না ফার্ষ্ট হইছিস ? তোর নাম ধরে ডাকলে এইখান থেকে বলবি, "ইয়েস স্যার" ?
- হা হা হা ! হু !

- এই যে ... তুই যে তোর গার্ল ফ্রেইন্ডকে (যে DU তে পড়ে না) এইখানে নিয়া আসছিস, এইটা কি ঠিক হইলো ?
- ক্যান ? সমস্যা কি ?
- তোর পোলাপাইন এই ছবি দেইখা কি কইবো ?
~ (পাশ থেকে আরেকজন) ক্যান ? ওর ছেলে মেয়ে তো ভাববে ওদের বাবা-মা সব সময়ই এক সাথে ছিল !
- হ ! হইছে কাম ! তখন যদি আমার পোলা কয়, "আব্বা, আমার বউ কই তাইলে ?" :P

অনেক অনেক ছবি তোলার মধ্য দিয়ে আজকে সমাবর্তনের ড্রেস রিহার্সালের দিনটি শেষ হল। অনেক অনেক ছবি তোলার মধ্যে আমাদের বেষ্ট পার্ট ছিল মনে হয় যোবায়ের মোবাইলের ক্যামেরায় তোলা সেলফি গুলা। কত অদ্ভুট টাইপের যে সেলফি আমরা তুললাম আজকে ! সব শেষে বন্ধুরা মিলে ডিনারে গেলাম বার্ড'স আই ভিউতে। খাবার মুটামুটি, কিন্তু যায়গাটা খুবই ভাল। শুধু বসে থাকার জন্য হলেও এক-আধবার যাওয়া যায় এরকম যায়গায়। যাই হোক, কাল সমাবর্তনের শেষ দিন। ভালয় ভালয় শেষ হোক সমাবর্তন, এই প্রত্যাশায়। :)


শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৪

৪৮ তম সমাবর্তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১ম পর্ব)

... টাই কিভাবে বাধঁতে হয় জানেন ? এই মুহুর্তে এটা জানাটা আমার জন্য খুব জরুরী একটা ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ্পা মারা এই টাই কেবল সমাবর্তনের দিনেই পরা সাজেঁ ... এখন টাইটা না বাধঁতে পারলে হবে ?

ওই, আমরা ডিনার কবে করবো ? আসবি তো ? আসবি না ক্যান ? লেট হবে ক্যান ? ওই দিন ক্যান ? ওই দিন না ক্যান ? তুই খারাপ ... তোর বাসায় ৯টার মধ্যেই ঢুকতে হবে ক্যান ?

দোস্ত আজকে আমার পায়ের মাপের জুতা পাইছি ! হুহাহাহাহা ... একটু বেশিই পরে যাবে, কি করবো বল ! পাচ্ছিলাম না তো ! যখন ওকে মন খারাপ করে বললাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ মারা এই টাই তো সমাবর্তনের দিনে না পরলে আর পরা হবে না ... ও না কেমন কেমন করে ম্যানেজ করে ফেললো জুতাটা ... বুঝলি ! আমি আর না করলাম না !

আব্বা, তোমাকে না বললাম ৬ তারিখ ফ্রি থাকবা ? আমরা সমাবর্তনের ছবি তুলবো ! তুমি অফিসে বললে কি হইত ? একটা দিন ম্যানেজ করতে পারলা না ? আচ্ছা থাক ... সমস্যা নাই, ৭ তারিখ ফ্রি থাইকো, আমি ফোন করলে ইউনিভার্সিটিতে চলে আইসো।

- আমি আর তোর ছবি তুইলা দিমু না !
- ক্যান ? দিবি না ক্যান ?
- এত কষ্ট কইরা মানুষজনের ছবি তুলি, কেউ ফটো কার্টেসি দেয় না ! কার ভাল লাগে বল ?
- আচ্ছা যা, দিয়ে দিচ্ছি। আর আমার ছবি না তুলে তোর উপায় আছে বল ? আমি না তোর বেষ্ট মডেল ? :P

- ওই দোস্ত, আমি তো গাউনের সাথে গলায় পরার ওইটা পাই নাই !
- দোস্ত আমি পাইছি, কিন্তু ও পায় নাই ! এখন আমারটা ওরে দিয়া দিছি। বেচারী মন খারাপ করবে !
- আচ্ছা, তাইলে ভিকটিম খালি আমি একাই না ! :D
- হ ... যখন কমপ্লেইন করলাম লোকটা যা পার্ট নিল না ! হুদাই ! আজাইরা !

- দোস্ত অনেক ছবি তোলাতুলি হইছে। চল এখন খাইতে যাই।
- কই যাবি ? পুরান ঢাকায় ?
- চল, নিরবে গিয়া ভাত খাই ! অনেক দিন কোরিয়া ছিলাম, শান্তি মত ভাত খাওয়া হয় না !
- দোস্ত অনেক দিন স্টারে যাই না ... চল ধানমন্ডি স্টারে যাই। ওইখানে ভাতও পাবি।
- চল চল ! ওইখানে অনেক দিন সবাই মিলে যাওয়া হয় না।

- দোস্ত, তোরা আজকে সবাই মাথার এই টুপির সাথে ম্যাচিং ড্রেস পরে আসছিস ক্যামনে ?
- ক্যামনে বলমু ... আমি তো জানতাম না মাথার টুপির সাথে এইটা মিলে যাবে।
- সমস্যা নাই, এইটার সাথে ম্যাচিং করে জামা কিনবনি।

- ওইখান থেকে নরমাল হইয়া হেঁটে আসো। আমি ছবি তুলতে থাকব।
- না না ... এভাবে হচ্ছে না। তুমি নরমালি হাটঁছো না ! রকিব ... তুই একটু হাইটা আয় তো। তোকে ছাড়া হবে না।
- এইতো সাব্বাস, বাঘের বাচ্চা। হইছে !

- আমরা পরে আইসা ভাল করছি না ? কোন লাইনে দাড়াইতে হয় নাই।
- সকালে আইসা মানুষজন আজকে ধরা খাইছে। ভাল হইছে।
- আচ্ছা, দ্যাখতো ... রবিবার মিশুক ভাইকে পাওয়া যাবে ছবি তোলার জন্য ?
~~ হ্যালো মিশুক ? তুই রবিবার ছবি তুলে দিতে পারবি আমাদের ?
~~ আমার তো ওইদিন অফিস আছে। আর আমার তো ক্যামেরাও নাই।
~~ ক্যামেরা প্রবলেম না। ক্যামেরা আছে ... তোর সময় থাকলে বল।
~~ নারে, অফিসে যাইতে হইবে ওইদিন।
- মিশুকের ওইদিন অফিস আছে। অয় আইতে পারবে না।
- আর কেউ আছে এমন ? নইলে আমার ছবি আর তোলা হবে না।
- ব্যাপার না ... দ্যাখ, তামিম-সজিব নিয়া আসবে না ?

ছবি-মালাঃ (গাউন পাওয়ার দিনে)

সবার সমাবর্তনেই মনে হয় এই টাইপের একটা ছবি থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের খুব প্রিয় দুই বন্ধুর সাথে।
এই ছবি কখনোই হয়ত আমাদের গল্পগুলিকে প্রকাশ করতে পারবে না।

প্রিয় বলিগ (বন্ধু + কলিগ) সাদের সাথে।

আমিঃ শুভ, ওই তোর দাতেঁর মধ্যে ফাঁক দেখা যায়। :P

সাদ ছবি তুলবে আগে বলে নাই। বললে দাঁড়ি কেটে যাইতাম।


বিঃ দ্রঃ সকল ছবির জন্য বন্ধু সাদের প্রতি বরাবরের মত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।