রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৩

কুরবানীর ঈদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা !!

যখন ছোট ছিলাম, স্কুলে পড়তাম ... তখন ঈদ কিংবা কুরবানীগুলি ছিল আমাদের জন্য অনাবিল আনন্দের উৎস। সব মামাতো খালাতো ভাই বোনেরা মিলে হই চই, আত্মীয় স্বজনের বাসায় ঘুড়াঘুড়ি, টিভিতে ঈদের প্রোগ্রাম দেখা ... কত্ত মজা করে যে সেই দিনগুলি পার করতাম। দেখা যেত, কোন খালার কিংবা মামার বাসায় দাওয়াত ... আমরা সব কাজিনরা মিলে দল বেঁধে সেখানে যাচ্ছি, মুটামিটি মিছিলের আকারে ... আর সেই মিছিলের নেতৃত্বে সব সময়েই থাকত আমাদের বাদল মামা। কুরবানী উপলক্ষে অনেক মজার মজার অভিজ্ঞতা ছিল ছোট্ট বেলার। সেখান থেকে কয়েকটি বলছি।

কুরবানীর ঈদ নিয়ে একটা মজার কথা মনে পরে গেল। তখন অনেক ছোট আমি, পটুয়াখালীতে থাকি। আমাদের বাসার কাছের মোড়ের দোকানে কিছু কিনতে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যা হয় হয় ... এরকম অবস্থা। এক লোক হাট থেকে গরু কিনে ফিরছিল। তো রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে এক লোক গরুর দাম জিজ্ঞেস করতে গিয়ে উচ্চস্বরে বলে ফেলল, "ও ভাই গরু, দাম কত !" এই পর্যন্ত ঠিক ছিল, রাস্তার কাছের সবাইই বুঝতে পারছিল লোকটা ভুল করে বলে ফেলছে। এর মধ্যেই যেই ব্যাটা গরু নিয়ে ফিরছিল তার স্বপ্রতিভ উত্তর, "আরে ভাই ছাগল, পচিঁশ হাজার টাকা"।

আরেকটা মজার অভিজ্ঞতা হইছিল কুরবানীর হাটে গিয়ে। সেবার আমি, আব্বা আর আমাদের এলাকার একজন ভদ্রলোক গিয়েছিলাম কুরবানীর হাটে। ওই ভদ্রলোকের নাম মফিজুর রহমান। তিনি আমাদের পটুয়াখালী সরকারী কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন বিধায়, সবাই উনাকে সম্মান করে "মফিজ স্যার" বলে ডাকতো। তো হাটে গিয়ে সেই মফিজ স্যার প্রথমেই একটা ছাগল কিনে আমার দ্বায়িত্বে সেটা রেখে হাটের ভিতরে আব্বাকে নিয়ে গেল গরু কিনতে। আমি বেশ ছোট ছিলাম তখন, তাই আমাকে আর ভিতরে নিয়ে যায় নাই। তো ভাল কথা ... কিছুক্ষন পরে উনাদের গরু কেনা শেষ হলে, আব্বা আমার খোঁজে হাটের বাইরে এসে দেখে অনেক মানুষের ভিড়। এই ভিড়ের মধ্যে না ঢুকে সে গেল গরুর কাছে। ভাবছিল, গরু নিয়ে বাসায় ফেরার পথে আমাকে একসাথে নিয়ে নিবে। এখানে উল্লেক্ষ্য, গরু ছিল আবার ওই মফিজ স্যারের কাছে রাখা। এখন আব্বা ভিতরে গিয়ে মফিজ স্যার কেও খুঁজে পাচ্ছিল না। শেষে আব্বা হাটের মধ্যে যারা মাইকে ঘোষনা দিচ্ছিল, তাদের কাছে গিয়ে বলল, "ভাই একটা ঘোষনা দেন তো। বলেন, রকিব এবং মফিজ স্যার ... আপনারা মাইকের কাছে চলে আসেন" ... ভীড় আর কোলাহলের মধ্যে ওই মাইকের ব্যাট্যা কি শুনল কে জানে। সে ঘোষনা দিল, "রকিব স্যার আর মফিজ, আপনারা যেখানে থাকুন না ক্যানো ... এখনই মাইকের কাছে চলে আসুন !" এই ঘোষনা যখন মাইকে বাজতেছিল, ততক্ষনে মফিজ স্যার আমাকে খুঁজে পেয়েছিল। ঘোষনাটি শুনার পরে উনার যে চেহারা হয়েছিল না ... দেখার মত !

আরেকবার আমরা একটু আগেই কুরবানীর গরু কিনে ফেলেছিলাম। তখন বোধহয় আমি ক্লাস এইটে পড়ি। রোজ বিকেলে আমিই গরু নিয়ে মাঠে যেতাম, ঘাস খাওয়াতে। খুব কাউবয় কাউবয় মার্কা ভাব নিয়ে গরু আনা নেওয়া করতাম। একদিন সন্ধ্যার সময় বাসায় ফিরছিলাম গরু নিয়ে। পাশ থেকে দুইটা মেয়ে যাচ্ছিল রিক্সায় করে। একজন হুট করে বলে উঠল, "দেখ ! দেখ ! একটা সুন্দর রাখাল বালক !" ... আমরা "ইভ টিজিং" নিয়ে অনেক সামাজিক আন্দোলন করি, অথচ সেদিন বিকেলটাতে আমি নিজেই "অ্যাডাম টিজিং"এর শিকার হয়েছিলাম। কাউকে বলা হয়নি সে কথা। :P

এরবাইরে বলতে গেলে, ফিরোজ মামার কথা বলতে হয়। একেবারে পিচ্চিকালে কেউ যখন সালামী দিত না, তখন মামা আমাদের অফার করত, "আধা ঘন্টা কোন কথা না বলে থাকতে পারলে পঞ্চাশ টাকা" ! কি যে কষ্ট করে পঞ্চাশ টাকা সালামী পাইতে হইত ... উফফ !

ইন্টারমিডিয়েটে ঢাকায় পড়তে আসার পর থেকেই ঈদের দিনগুলির ম্যজিক কমতে থাকে ধীরে ধীরে। ঈদের পরপরই ঢাকায় ফেরার ব্যাস্ততা, অনেক কাজিনের ঈদের ছুটিতে পটুয়াখালীতে না যাওয়া এটার জন্য অনেকাংশে দায়ী। আর এখন চাকুরীর সুবাদে ঈদ হয়ে গেছে "বর্ধিত সপ্তাহান্ত" (এক্সটেন্ডেড উইকেন্ড) ! সব শেষে আম্মা আমেরীকাতে চলে যাওয়ার পরে, আমাদের আসলে ঈদ বলে কিছুই নেই ! আহারে, হারিয়ে ফেললাম স্বপ্নীল সেই ঈদের দিনগুলি ! :(

রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৩

স্বপ্নালু আমি

"ছোট্ট একটা বাড়ি থাকবে তার, শহরে নয়, শহরতলিতে; যেখানে লাল কাঁকরের রাস্তা আছে আর আছে নীল আর সবুজের সমারোহ। মাঝে মাঝে দু-পায়ে কাঁকর মাড়িয়ে বেড়াতে বেরুবে ওরা। সকালে কিম্বা সন্ধ্যায়। রাস্তায় লোকজনের ভীড় থাকবে না। নিরালা পথে মন খুলে গল্প করবে ওরা, কথা বলবে।" - শেষ বিকেলের মেয়ে by জহির রায়হান

এইরকম একটা স্বপ্ন দেখতে পারলে কাজে লাগত। প্রবলেম হইল, এখন আর ওরকম শহরতলি পাওয়া যাবে না । আর নিতান্তই পাওয়া গেলেও, সেখানটায় "দু-পায়ে কাঁকর মাড়িয়ে বেড়াতে পারব" ... এমনটা তো মনে হয় কখনোই হবার নয় ! "বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ" বিভাগের সৌজন্যে কবে সব রাস্তা পাকা হয়ে গিয়েছে ! ওরকম শহরতলি জহির রায়হানের ওই সময়টাতেই (ষাটের দশকের বাংলা) ছিল!

আমি স্বপ্ন দেখি, গুলশান বনানীর দোতালা যেই সুন্দর সুন্দর বাড়ীগুলি আছে, ওইরকম একটা বাড়ী বানাবো। সামনে থাকবে বিশাল লন, তাতে সারি সারি সবুজ ঘাস কিংবা ফুলের বাগান ... ছুটির দিনে মেয়েকে সাথে নিয়ে বাগানে কাজ করবো। পিছনে কিংবা ছাদে একটা সুইমিংপুল, জায়গা একটু বেশি পাওয়া গেলে একটা গলফ কোর্সও রাখা যাইতো। থাকবে বিশাল একটা রুম আর একটা জায়ান্ট স্ক্রিন, সপ্তাহান্তে বন্ধু বান্ধব নিয়া সেটায় কারেন্ট রিলিজের মুভিগুলি দেখবো খুব মজা করে। মাঝে মাঝে গভীর রাতে গাড়ীতে করে সব বন্ধু-বান্ধব মিলে যাব মাওয়া কিংবা আরিচা (এখন গেলে লোকাল বাসে ঝুলে ঝুলে যাওয়া লাগে, আরাম পাই না !) ... অথবা কোন এক চাদঁনী রাতে প্রিয় কাউকে পাশে বসিয়ে লং ড্রাইভে। একটা ভাল মানের এয়ারগান থাকবে, শীতে সেটা নিয়ে যাব বন্ধু সাদের দেশের বাগান-বাড়ীতে ... শিকার করতে। শেষ ইচ্ছা হিসেবে থাকবে নিজের একটা ইয়ট! টেকনাফ থেকে সেটায় করে সেইন্ট মার্টিন যাব। ... সমস্যা হইল এই সব স্বপ্ন কখনো পুরন হবার নয় ! মুভি দেখা বাদ দিতে হবে মনে হচ্ছে !

Zaman Shajib কে ধন্যবাদ, শহরতলির কথা আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য !
 — feeling স্বপ্নালু আমি !