সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৩

দৈনিক কথন, ১৫ জুলাই ২০১৩

আজকে সকালের ঘুমটা ভেঙ্গেছে অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখে। থিসিস ডিফেন্সে আমি আমার স্পিচ দিচ্ছি। সামনে বসে আছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় সুরাইয়া পারভিন ম্যাডাম, রাজ্জাক স্যার আর সামিউল্লাহ স্যার। এদের মধ্যে সুরাইয়া ম্যাডাম আর সামিউল্লাহ ভাইয়ের কোন আগ্রহই নাই আমি কি বলছি সেটাতে। কেবল রাজ্জাক স্যার খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছে আর মিটিমিটি হাসছে। এদিকে আমি স্যারের রহস্যময় হাসিতে পুরাপুরি বিভ্রান্ত হয়ে আমতা আমতা করছি। আমি যতই এভাবে আমতা আমতা করছি, স্যারের মুখের হাসি ততই প্রসারিত হচ্ছে। একসময় স্যার অনেকটা আগের কালের বাংলা সিনেমার নায়কদের মত "মুহাহাহা" টাইপের হাসি দেওয়া শুরু করল। আর সেই হাসির শব্দে আমার ঘুম  গেল ভেঙ্গে। উঠে দেখি স্যার হাসছে না, আমার মোবাইল বাজতেছে। ধরার আগেই লাইনটা ছেড়ে গেল। দেখি সাদ ফোন দিছে। আজকে আমার থিসিসের ভাইভা হওয়ার কথা, সকালে উঠে হলে যাব ... আসিফের সাথে কাজ করবো বলে। এর মধ্যে সাদ আবার ফোন করে ক্যান? ওকে ফোন ব্যাক করতেই ও দুঃসংবাদটা দিল। আমার মেধাবী হওয়ার সর্বশেষ সুযোগটা আমি হাতছাড়া করলাম।

ব্যাপারটা খোলসা করি। আজকে আমার থিসিস ডিফেন্স ছিল। আজকেই আবার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত গোলাম আজমের রায় হবে। সেই উপলক্ষে জামাত-ই-ইসলামী হরতাল ডেকেছে। এর মধ্যে কি থিসিস ডিফেন্স হবে? এই ব্যাপারে ডিপার্টমেন্টের হাব-ভাব গতকাল পর্যন্ত ছিল অনেকটা এমন যে, "অনেক হইছে বাপু ... আর না ! এইবার পরীক্ষাটা শেষ কর ! আর হরতালের মধ্যে পরে কেউ মারা গেলে তো বেঁচেই গেলা ! পুরাই মেধাবী !" এহেনো কঠিন অবস্থান থেকে সরে এসে ডিপার্টমেন্ট মুটামুটি সহজ একটা পথে হাঁটার চেষ্টা করল। পরে জানানো হবে এই মর্মে একটা নোটিশ ঝুলায়ে দিল আমাদের সামনে। এরমানে সহজ, আজকে অফিসে যেতে হবে।

ঘুমটুমের কথা ঝেড়ে ফেলে দ্রুত যোবায়েরকে ফোন দিয়ে বের হতে বললাম। একটা সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম অফিসে। অফিসে আবার এই রোজার মধ্যে একেবারেই সময় কাটে না। খাওয়া দাওয়া নাই, কিছু নাই। সময় কাটবে কিভাবে ? কোমড়টা চেয়ারে দিতেই হঠাৎ অনুভব করলাম, জ্বর তাহার সকল শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসছে। মাথাটা ঘুড়েও উঠলো মনে হইল। মনেহয় থিসিস ডিফেন্স নিয়ে অতিরক্ত চিন্তার কারনে ব্যাপারটা হইছে। চোখে মুটামুটি অন্ধকার দেখা শুরু করলাম, কোন দিকে তাকাতেই পারছি না ! মাথাটা নিচু করে কতক্ষন চুপচাপ বসে থাকলাম। দেখি কাজ হয় না। যাই হোক, অফিসে খুব বেশি প্রেশার না নিয়ে থাকলাম সারাদিন। অবশ্য মনের মধ্যে কুট কুট করতেছিল, কারন আমি এরমধ্যে অনেকটা দিন ছুটি নিয়ে নিয়েছি অফিস থেকে, থিসিসের কাজের জন্য। অসুস্থ হয়ে গেলে আবার পাইন, বুঝলাম দ্বায়িত্ব জ্ঞান বাড়ছে।

দুপুরের দিকে অফিসে অমি আপুর ডেস্কের দিকে তাকাতেই মনে পরলো জামাত-ই-ইসলামী বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির গোলাম আজমের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের করা যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় হবে আজকে। কয়েকটি অনলাইন পত্রিকার সাইটে ঢুকলাম। আগে থেকেই আমার মনে হচ্ছিল গোলাম আজমের রায়ে সরকার একটা বিশেষ কিছু করবে। আমার এরকমটা মনে হওয়ার কারনটা বলি আমার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে। এই গোলাম আজমের বিচারের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে মুটামুটি মাসখানেকের বেশি আগে। ব্যাপারটাকে দ্রুত সামনে থেকে সরায়ে ফেলা হয়েছে, কারন সরকার চায় যখন দেশের মানুষকে আরেক দফা মূলা খাওয়াতে হবে, তখনই ব্যাপারটাকে সামনে নিয়ে আসা হবে। আরেকটা ব্যাপার ছিল যে, গোলাম আজমের বয়স এখনই মুটামুটি ৯০ বছরের মত। সো উনাকে যদি বয়স বিবেচনায় ফাঁসি না দেওয়া যায়, জনগন আবার ব্যাপারটা নিয়ে বেশ কিছুদিন লাফালাফি করবে।

ব্যাপারটার সাথে বর্তমান অবস্থাটা মিলিয়ে নিন। বিসিএস এর কোটা নিয়ে দেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ কাজ করছে। এরমধ্যে কয়েক দফা আন্দোলনও করেছে সাধারন ছাত্রছাত্রীরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই আন্দোলনে মাথানত করে পিএসসি এর মধ্যে আরেকটি রিভাইজড ফল প্রকাশ করেছে। এইনিয়ে অনেকের মধ্যেই চাপা সন্দেহ ছিল এই যে, এই পুনঃপ্রকাশিত ফলাফল হয়ত আইওয়াশ। বর্তমান আন্দোলনে প্রলেপ দিতে এই ফল প্রকাশ করা হয়েছে, যাদেরকে নতুন করে বিবেচনায় নেওয়া হল ... তাদেরকে হয়ত পরের স্টেজেই বাদ দেওয়া হতে পারে। সো, সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে বিভন্ন "কোটা"র বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেটাই হয়ত আবারো শুরু হত। আর সকলেই কম বেশি জানেন, দেশের ছাত্র সমাজের আন্দোলনের ফলাফল কতদূর পর্যন্ত গড়াতে পারে।

এই অবস্থাতেই যেহেতু গোলাম আজমের রায়টা দেওয়া হচ্ছে, সো, কিছু একটা হয়ে থাকতে পারে বলে আমার সন্দেহ হচ্ছিল আগে থেকেই। দুপুর নাগাদ জানতে পারলাম, যেরকমটা ভাবছিলাম সেরকমই একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। গোলাম আজমকে ৯০ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। সাথে সাথে জনগনের দৃষ্টি ঘুড়ে গেল, সবারই এখন প্রশ্ন, '৭১এ স্বাধীনতার সময় শিশু ও বৃদ্ধদেরকে মারার সময় কি বয়স বিবেচনা করা হয়েছিল?

আমি এইব্যাপারটাতে যখনই  কোন মন্তব্য করতে যাব তখনই নেটে দেখলাম গতকাল আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সাথে জামাত-ই-ইসলামী বাংলাদেশ এর কিছু নেতার মিটিং হয়েছে বাংলাদেশের আমেরিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ছিল দরবেশ সালমান এফ রহমান, আর বিচিত্র গহর রিজভী। বুঝে গেলাম, সমঝোতাটা শুধু শুধু আসে নাই। কিছু মাল-পানির লেনদেনও হতে পারে। যাই হোক, আমি রাজনীতির এত গভীরে নিজেকে প্রবেশ করাতে চাই না। আওয়ামী লীগ যদি মনে করে এই বিচারের রায় নিয়ে আতাঁত করলেই তাদের পিঠ বাঁচাতে পারবে, তাহলে তারা মস্ত বড় ভুলের দুনিয়াতে আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন একটা ব্যাপার। কারন, এই ব্যাপারের বহু দেশ ও সংস্থার চাপ থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। আমেরিকা, ইংল্যান্ড হতে শুরু করে আমাদের মুসলিম ভাইদের দেশ সৌদি আরব কিংবা পাকিস্তান ... ওআইসি, কিংবা আরব লীগ, সবাই এই ব্যাপারটাতে যে চাপ দিবে সেইটা তো আমিই বাসায় বসে জানতাম। আর আমি বাসায় বসে বসে পেপার পত্রিকা পড়ে যেটা বুঝতে পারলাম, সরকার সেই ব্যাপারটাই যে একেবারেই বুঝতে পারে নাই, আর যেই হোক, আমি বিশ্বাস করি না। প্রশ্ন হচ্ছে, চাপে যদি নত স্বীকার করতেই হয়, তাহলে কেন দেশের মানুষের আবেগকে উষ্কে দেওয়া হল ? সরকারটা না একেবারে বোকা !

আমার লেখায় আবার ফিরে আসি। বাসায় এসেই গড়িয়ে পরলাম বিছানাতে। আসরের নামাজটাও গেল সাথে। ঘুম থেকে উঠছি যখন মাগরীবের আযান দিচ্ছে তখন। উঠেই ইফতারী সারলাম। শরীর বেশি খারাপ করছে। জ্বরের সাথে এখন বোনাস আকারে সর্দিও জুটে গেছে। কাল অফিস কিভাবে করবো বুঝতেছি না। অফিস কামাই দিতে আর ইচ্ছা করে না। দ্বায়িত্ব বোধ, সবই দ্বায়িত্ববোধ যে !

শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৩

দৈনিক কথন, ৬ জুলাই ২০১৩

এর মধ্যে একদিন বাসার কিছু মানুষজন এর জন্যে কেনা কাটা করতে গেলাম। কথা শুরুর আগেই বলে রাখি এখনো বেতন পাই নাই, সো ওই রিলেটেড ঘ্যান ঘ্যান-প্যান প্যান বন্ধ। যাই হোক, বড় আপুর একটা শাড়ীর জন্য "ড্রেসী ডল" নামের একটা দোকানে গেলাম। ওদের কালেকশন বেশ ভাল বলতে হবে। কাপড় দেখতে দেখতে একটা কাপড়ের দামের ট্যাগ দেখে আমার চক্ষু পুরা চড়ক গাছ! কারন কাপড়টার দাম মাত্র ২৫,০০০/= টাকা। এরপর পটাপট কয়েকটা কাপড়ের দামে চোখ বুলিয়ে নিলাম, সর্বনিম্ন ২০,০০০/= পর্জন্ত নামতে পারলাম ... এর নিচে কোন দাম খুঁজে পেলাম না। মনে মনে চিন্তা করলাম ... ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কাউকে একটা মাত্র কাপড় কিনে দিতে হইলে নিজের মাসিক ইনকাম কত হইতে হবে ? কিছুতেই সেই অংক মিলাতে পারলাম না ...

এরপর গেলাম "অ্যান্ডি সিল্ক" নামের একটা ঘোড়ার ডিম কিনতে। ঘোড়ার ডিমের কথা শুনে কি চোখটা একটু কুচকালেন ? ঘোড়ার ডিম যেমন একটি "অলিক বস্তু", ঠিক তেমনি অ্যান্ডি সিল্ক হইল "অলিক সিল্ক"। ৫/৭ টা দোকানে খুঁজলাম, অ্যানি সিল্কের নামে একেক জন একেক টাইপের কাপড় দেখায়ে দিল। বলি, কাপড় চিনি না দেখে কি এরকম মজা নিল নাকি ? খালি অ্যান্ডি সিল্ক হইলেও কথা ছিল। এর সাথে জুড়ে গেছে "কাতান পাড়" ! মেয়েদের আবদার দেখে আমার মাঝে মাঝে চিৎকার করে কাদঁতে ইচ্ছা করে। হে ঈশ্বর, ছেলেদের জামার সাথে "কাতান পাড়" যুক্ত করলে না ক্যান ?

যাই হোক, ফেসবুকে আজকের আলোচনা দেখে তো মনে হচ্ছে "তেতুল" বোধহয় এইদফা দেশের জাতীয় ফলের মর্যাদা পেয়েছে ! নাকি সবাই মিলে একসাথে প্রেগনেন্ট হয়ে গিয়েছেন ? (মাফ করবেন, প্রেগনেন্ট হইলে খালি যে তেতুলের আচারই খাইতে ইচ্ছা করে এমন মনে হয় না, অন্য ফলের আচারও মনে হয় খাইতে ইচ্ছা করে। কারন লেখাটার ড্রাফট একজন নারীকে পড়তে দিলাম, সেই আমার এই ধারনার ভুলটি ধরিয়ে দিল।) যাই হোক, আমরা জাতিগত ভাবে সমালোচনা প্রিয়। সো তেতুল নিয়ে জল যে অনেক দূর যাবে এখনই বোঝা যাচ্ছে।

গেল কিছু দিন ধরে মানসিক উদ্দিপনাহীনতায় ভুগছি। আশে পাশে অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই আগ্রহ পাচ্ছি না। এই মাসের ১১ তারিখ থিসিস রিপোর্ট জমা দিতে হবে, সেই জন্য অফিস থেকে দুই দিনের ছুটিও নিলাম। সাথে দুইটা সাপ্তাহিক ছুটির দিন পাইলাম, কিন্তু তেমন কোন কাজই করলাম না। এরকম মাঝে মাঝে হয়, যখন আমি খুব করে বিষন্নতায় ভুগী। এইসময়টাতে কোন কিছুই ভাল লাগে না। কাল থেকে আবার অফিস করা লাগবে, কিছুতেই চাচ্ছি না এই অবস্থাটা অফিসেও থাকুক।

অফিসে আমার ডেস্কের জন্য কিছু জিনিস পত্র কিনলাম। দুইটা ফুলের শো পিস টাইপের জিনিস, একটা কলম-দানী, একটা কুশন। কুশনটা কিনছি পিঠের নিচে দেওয়ার জন্য। পিঠে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যেই।

সকালে ঘুম থেকে উঠে মিশুকের ফোন পেলাম। ও বলল আজকে নাকি রাজ্জাক স্যারের সাথে কথা বলছে "বই শেয়ার" এর ব্যাপারে। যোবায়ের নাকি ওরে স্যারের রুমে দিয়ে কোথায় যেন গেছে। এরপর যোবায়েরকে ফোন করলাম। সে বলল শুভ-পিঙ্কি নাকি ওরে খাওয়াচ্ছে "লাসানিয়া কাবানা"তে। ও শুভরে ফোন দিল এরপর। শুভ খুব ভুল হয়ে গেছে এমন ভঙ্গীতে আমাকে বলে ৩০ মিনিটের মধ্যে লাসানিয়া কাবানাতে যেতে পারবো কিনা। কি অদ্ভুত! আমি কি ওর কাছে খেতে চাইছি নাকি ? পোলাপাইনগুলিও কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। ওরা ইউনিতে আসলেও এখন আর আগের মত জানায় না। ভাল !

ফেসবুকে আজকাল কোন কিছু নিয়ে মন্তব্য করতে ভাল লাগে না। ভাল না লাগার প্রধান কারনটা আমি নিজেই। কোন একটি পক্ষের প্রতি সামান্য দুর্বলতা থাকা অবস্থায় কোন মন্তব্য করা আসলে সমীচিন নয়। কথাটা আমরা অনেক সময়ই ভুলে যাই।